কাশির ট্যাবলেট এর নাম

কাশির ট্যাবলেট এর নাম কি?

কাশি আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা ফুসফুস বা গলা থেকে জমে থাকা মিউকাস (কফ), ধুলোবালি বা জীবাণু বের করে দেয়। এটি একটি সাধারণ সমস্যা, কিন্তু কখনো কখনো এটি বেশ বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। কাশি থেকে মুক্তি পেতে অনেক সময় আমরা ওষুধের সাহায্য নিই। আজকের ব্লগে আমরা কাশির ট্যাবলেটের নাম, কাজ, এবং সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা সহজ ভাষায় জানাবো।

কাশির ধরণ অনুযায়ী ওষুধ বাছাই করুন:

কাশির ট্যাবলেট বেছে নেওয়ার আগে প্রথমে কাশির ধরন বুঝতে হবে। কাশি সাধারণত দুই ধরনের হয়:

  1. শুকনা কাশি (Dry Cough): এখানে কোনো কফ থাকে না, এবং এটি সাধারণত গলা শুষ্ক বা অস্বস্তিকর থাকার কারণে হয়।
  2. ভেজা কাশি (Wet Cough): এখানে কফ জমে থাকে এবং এটি বের করার জন্য কাশি হয়।

এই দুই ধরনের কাশির জন্য আলাদা ধরনের ওষুধ বা ট্যাবলেট প্রয়োজন হয়।

কাশির ট্যাবলেটের নাম এবং কাজ:

শুকনা কাশির জন্য ট্যাবলেট

শুকনা কাশিতে গলা ব্যথা বা শুষ্কতা বেশি থাকে। তাই এই ধরনের কাশির জন্য ওষুধ হয় গলাকে আর্দ্র এবং কাশি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। নিচে কিছু জনপ্রিয় শুকনা কাশির ট্যাবলেটের নাম দেওয়া হলো:

  1. ডেক্সট্রোমেথরফ্যান (Dextromethorphan):
    • এটি বেশিরভাগ শুকনা কাশির ওষুধে ব্যবহার হয়।
    • কাজ: এটি মস্তিষ্কের কাশির কেন্দ্রকে শান্ত করে কাশি থামায়।
    • উদাহরণ:
      • Tusca D
      • Benadryl Cough Suppressant
  2. লেভোড্রোপ্রোপিজিন (Levodropropizine):
    • কাজ: এটি শুকনা কাশি কমাতে সাহায্য করে।
    • উদাহরণ:
      • Levotuss
      • Zecuf
  3. ফেক্সোফেনাডিন বা লোরাটাডিন (Fexofenadine/Loratadine):
    • কাজ: যদি কাশি অ্যালার্জির কারণে হয়, তবে এই ধরনের অ্যান্টি-হিস্টামিন ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
    • উদাহরণ:
      • Telfast
      • Loratin

ভেজা কাশির জন্য ট্যাবলেট

ভেজা কাশির জন্য কফ পাতলা করা এবং সহজে বের করে দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য নিচের ওষুধগুলো কার্যকর:

  1. অ্যামব্রোক্সল (Ambroxol):
    • কাজ: এটি কফকে পাতলা করে সহজে বের হতে সাহায্য করে।
    • উদাহরণ:
      • Ambrolite
      • Mucolite
  2. ব্রোমহেক্সিন (Bromhexine):
    • কাজ: এটি মিউকাস ভেঙে ফেলে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার করে।
    • উদাহরণ:
      • Bisolvon
      • Bromolyn
  3. গুয়াইফেনেসিন (Guaifenesin):
    • কাজ: এটি একটি এক্সপেক্টোরান্ট যা কফ সহজে বের করে।
    • উদাহরণ:
      • Tussin
      • Robitussin
  4. কার্বোসিস্টাইন (Carbocisteine):
    • কাজ: এটি কফকে পাতলা করে এবং কাশি থেকে মুক্তি দেয়।
    • উদাহরণ:
      • Solmux
      • Mucodyne

কাশির ট্যাবলেট কীভাবে খাওয়া উচিত?

কাশির ট্যাবলেট খাওয়ার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  1. ডাক্তারের পরামর্শ:
    • কাশির ওষুধ নেওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
    • ভুল ওষুধ খেলে কাশি আরও বেড়ে যেতে পারে।
  2. ডোজ মেনে চলুন:
    • নির্দেশিত ডোজ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
    • অতিরিক্ত ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
  3. খাবারের পরে সেবন:
    • বেশিরভাগ কাশির ট্যাবলেট খাবারের পরে খাওয়া ভালো। এটি পেটের জন্য নিরাপদ।
  4. অন্যান্য ওষুধের সাথে মিল:
    • যদি আপনি অন্য কোনো ওষুধ খাচ্ছেন, তবে ডাক্তারের কাছে তা জানিয়ে নিন।
  5. গর্ভাবস্থা ও শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্কতা:
    • গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না।

কাশির ট্যাবলেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

কাশির ট্যাবলেট সাধারণত নিরাপদ, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন:

  • ঘুম ঘুম ভাব
  • মাথা ঘোরা
  • বমি বমি ভাব
  • হজমে সমস্যা
  • অ্যালার্জি (চুলকানি বা ফোলাভাব)

যদি উপরের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়:

ওষুধ ছাড়াও কিছু ঘরোয়া উপায় কাশির উপশম করতে পারে। যেমন:

  1. মধু ও লেবু:
    • হালকা গরম পানিতে মধু এবং লেবু মিশিয়ে পান করলে কাশি কমে।
  2. আদার চা:
    • আদা গলা নরম করে এবং শুকনা কাশির উপশমে সাহায্য করে।
  3. বাষ্প গ্রহণ:
    • গরম পানির বাষ্প নিলে শ্বাসনালী পরিষ্কার হয়।
  4. লবণ পানি দিয়ে গার্গল:
    • লবণ পানি দিয়ে গার্গল করলে গলার প্রদাহ কমে।
  5. প্রচুর পানি পান:
    • বেশি পানি পান করলে কফ পাতলা হয়ে যায়।

কাশি কখন ডাক্তারের কাছে দেখাবেন?

  • কাশি যদি ৩ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়।
  • কাশির সাথে রক্ত বের হলে।
  • তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে।
  • উচ্চমাত্রার জ্বরের সাথে কাশি হলে।

উপসংহার:

কাশি সাধারণ একটি সমস্যা হলেও কখনো কখনো এটি জীবনের মান নষ্ট করতে পারে। সঠিক ওষুধ ব্যবহার এবং কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চললে কাশি থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো। নিজের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন!

Scroll to Top