ডেঙ্গু জ্বরের টেস্টের নাম ?
ডেঙ্গু জ্বরের সঠিক নির্ণয়ের জন্য কয়েকটি টেস্ট করা হয়, যার মাধ্যমে জানা যায় রোগী ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত কি না। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের ডায়াগনোসিস নির্ভর করে রক্ত পরীক্ষা এবং ল্যাব টেস্ট এর উপর। নিচে ডেঙ্গু জ্বরের টেস্টের নাম গুলো সুন্দর করে দেয়া হলো।
ডেঙ্গু জ্বরের টেস্টের নাম এগুলো হলো:
১. এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট (NS1 Antigen Test):
এই টেস্টটি ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক ধাপে সবচেয়ে কার্যকর। ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি প্রথম ৩-৫ দিনের মধ্যে এই পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। এটি মূলত রক্তের মধ্যে থাকা ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রোটিন শনাক্ত করে।
২. ডেঙ্গু আইজিজি এবং আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট (Dengue IgG and IgM Antibody Test):
এই পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের ইমিউন সিস্টেম কতটা সক্রিয় হয়েছে, তা বোঝা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় ৫-৭ দিনের মধ্যে IgM অ্যান্টিবডি এবং পরে IgG অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হয়।
৩. সিবিসি (Complete Blood Count – CBC):
এই টেস্টটি রক্তের প্লেটলেট কাউন্ট এবং হেমাটোক্রিট লেভেল পরীক্ষা করতে সাহায্য করে। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্লেটলেট সংখ্যা কমে যায় এবং হেমাটোক্রিট লেভেল বেড়ে যায়।
৪. পিসিআর টেস্ট (Polymerase Chain Reaction – PCR):
এই পরীক্ষা খুবই নির্ভুল এবং ডেঙ্গু ভাইরাসের ডিএনএ বা আরএনএ শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। তবে, এই পরীক্ষা তুলনামূলক ব্যয়বহুল এবং সব ল্যাবরেটরিতে এটি উপলব্ধ নয়।
৫. এলাইজা টেস্ট (ELISA Test):
এই টেস্ট ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি নির্ভুল এবং নির্ভরযোগ্য একটি পদ্ধতি।
ডেঙ্গু টেস্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ:
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সাধারণত অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের মতোই হতে পারে। তাই, সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য এই টেস্টগুলি গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু সনাক্ত না হলে বা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে রোগীর অবস্থা গুরুতর হতে পারে। বিশেষ করে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS) রোগীর জন্য মারাত্মক হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
- হঠাৎ উচ্চ জ্বর
- তীব্র মাথাব্যথা
- চোখের পেছনে ব্যথা
- পেশি ও গাঁটের ব্যথা
- চামড়ার ওপর লালচে দাগ
- বমি বমি ভাব বা বমি করা
- প্লেটলেট সংখ্যা কমে যাওয়া
ডেঙ্গু টেস্ট করার সময় সতর্কতা:
১. প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লক্ষণগুলো বোঝার পর চিকিৎসক সঠিক টেস্টের পরামর্শ দেবেন।
২. নির্ভরযোগ্য এবং সনদপ্রাপ্ত ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করান।
৩. টেস্টের রিপোর্ট যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়:
১. মশার কামড় থেকে সুরক্ষা:
- মশারী ব্যবহার করুন।
- ঘুমানোর সময় মশা নিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
২. পানি জমতে না দেওয়া:
- ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, এবং অন্য যেকোনো জায়গায় পানি জমতে না দিন।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
- আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন।
- মশা নিরোধক ধোঁয়া ব্যবহার করুন।
উপসংহার:
ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্মক রোগ, তবে সঠিক সময়ে টেস্ট এবং চিকিৎসা নিলে এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব। ডেঙ্গু টেস্ট সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। তাই, লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং টেস্ট করান। মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতন থাকুন এবং নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখুন।