ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে ?
ডেঙ্গু জ্বর মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটি সাধারণত এডিস ইজিপ্টাই বা এডিস এলবোপিকটাস প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ডেঙ্গু সাধারণত গ্রীষ্মপ্রধান এবং উষ্ণ জলবায়ুতে বেশি দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বর কী?
ডেঙ্গু জ্বর হলো ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। এটি সাধারণত এডিস মশার কামড় থেকে সংক্রমিত হয়, যা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত চারটি ভাইরাস স্ট্রেইনের (DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4) মাধ্যমে হতে পারে। এটি মানুষের শরীরে প্রবেশের পর বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে?
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। তবে জ্বর পুরোপুরি সেরে উঠতে দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। এটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত:
- ফেব্রাইল স্টেজ (জ্বর পর্যায়): এই পর্যায়টি ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। এই সময়ে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেশি ও গাঁটে ব্যথা, এবং ত্বকে লালচে দাগ দেখা যায়।
- ক্রিটিক্যাল স্টেজ (গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়): জ্বর কমে যাওয়ার পরের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বা রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই এই সময়ে রোগীকে খুব যত্নসহকারে পর্যবেক্ষণ করতে হয়।
- রিকভারি স্টেজ (সেরে ওঠার পর্যায়): এই পর্যায়ে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। রক্তচাপ স্বাভাবিক হয় এবং শরীরের কার্যক্ষমতা ফিরে আসে। তবে ক্লান্তি ও দুর্বলতা কিছুদিন থাকতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- হঠাৎ তীব্র জ্বর (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি)।
- তীব্র মাথাব্যথা।
- চোখের পেছনে ব্যথা।
- পেশি ও গাঁটে ব্যথা।
- ত্বকে র্যাশ বা লালচে দাগ।
- বমি বমি ভাব বা বমি।
- শরীরে তীব্র দুর্বলতা।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ:
ডেঙ্গু জ্বরের মূল কারণ হলো এডিস মশার কামড়। মশার কামড়ানোর সময় ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের রক্তে প্রবেশ করে এবং রোগ সৃষ্টি করে। পরিষ্কার পানি জমে থাকা স্থানে এডিস মশার জন্ম হয়। তাই বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি।
ডেঙ্গু জ্বর থেকে কীভাবে বাঁচা যায়?
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত:
- মশার কামড় এড়াতে মশারি ব্যবহার করুন।
- দিনের বেলায় ফুলহাতা জামা ও লম্বা প্যান্ট পরুন।
- মশা তাড়ানোর স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করুন।
- বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখুন।
ডেঙ্গু জ্বরে কী করবেন?
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করুন:
- প্রচুর পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন।
- প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করুন (ডাক্তারের পরামর্শে)।
- সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন।
- রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- অতিরিক্ত অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডেঙ্গু জ্বর কতটা বিপজ্জনক?
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত জীবনঘাতী নয়। তবে যদি এটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পরিণত হয়, তাহলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া উচিত।
উপসংহার:
ডেঙ্গু জ্বর একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ হলেও সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং মশার কামড় এড়াতে সতর্ক থাকুন। ডেঙ্গুর কোনো টিকা বা নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তাই প্রতিরোধই এর সবচেয়ে ভালো উপায়।