দ্রুত ওজন বাড়ে কি খেলে

দ্রুত ওজন বাড়ে কি খেলে:

দ্রুত ওজন বাড়ানোর জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মানুষের ওজন বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে প্রাকৃতিক এবংc  সুস্থ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং কোনো সমস্যা না হয়। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি শরীরের জন্য বিপদজনক হতে পারে, যেমন ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। তাই ব্যালান্সড ডায়েটের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি করা সর্বোত্তম।

ওজন কেন কম হয়?

ওজন কম হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন:

  1. বংশগত কারণ – কিছু মানুষের মেটাবলিজম দ্রুত হয়, ফলে তাদের ওজন সহজে বাড়ে না।
  2. অপর্যাপ্ত পুষ্টি – প্রয়োজনীয় ক্যালোরি এবং প্রোটিন না খেলে ওজন কম থাকে।
  3. হাইপারথাইরয়েডিজম – থাইরয়েড হরমোন বেশি হলে ওজন কমে যায়।
  4. পাচনতন্ত্রের সমস্যা – হজমশক্তি দুর্বল হলে খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ হয় না।
  5. মানসিক চাপ বা ডিপ্রেশন – স্ট্রেসের কারণে ক্ষুধা কমে যায়, ফলে ওজন কম হয়।
  6. ক্রনিক অসুস্থতা – ডায়াবেটিস, টিবি, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগে ওজন কমে যেতে পারে।

ওজন বাড়ানোর আগে এর কারণ জানা জরুরি। যদি কোনো মেডিকেল সমস্যা থাকে, তাহলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

দ্রুত ওজন বাড়ে কি খেলে:

শক্তিশালী প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:

প্রোটিন হলো শরীরের পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পেশি বাড়ানোর জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

  • মাছ: সালমন, টুনা, ম্যাকরেল, এগুলো ভালো প্রোটিনের উৎস।
  • মুরগির মাংস: মুরগির বুকের মাংস খুব ভালো প্রোটিন দেয় এবং এর ক্যালোরি পরিমাণও উচ্চ।
  • ডিম: একাধিক পুষ্টির উৎস, এতে ভালো পরিমাণে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে।
  • পনির: এটি খুব ভালো প্রোটিন এবং ক্যালোরির উৎস, বিশেষ করে কটেজ চিজ।
  • বিনস: বিভিন্ন ধরনের বিনস (মটরশুঁটি, সয়াবিন) প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবারেরও ভালো উৎস।
  • দুধ ও দই: দুধ প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। দই ভালো প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

2. ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার:

ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সহজেই দ্রুত ওজন বাড়ানো সম্ভব। এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি যোগ হয়।

  • আলু: উচ্চ ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। আলু ভাজা, সেদ্ধ বা রান্না করে খাওয়া যায়।
  • মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুতে উচ্চ ক্যালোরি থাকে এবং এতে ভিটামিন A, B এবং ফাইবারও থাকে।
  • কাঠবাদাম: উচ্চ ক্যালোরি ও ফ্যাট সমৃদ্ধ। প্রতিদিন ছোট পরিমাণে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • ড্রাইফ্রুটস: কিসমিস, আখরোট, খেজুর, প্রুনস ইত্যাদি ড্রাইফ্রুটস ক্যালোরির উৎস এবং শক্তির যোগান দেয়।
  • অ্যাভোকাডো: এটি এক ধরনের ফল যা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ এবং ক্যালোরি বাড়াতে সাহায্য করে।

3. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট:

শরীরে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যোগ করতে হবে যাতে এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরি করে।

  • বাদাম: যেমন আখরোট, পেস্তাবাদাম, কাঁচা মাখন বা চিনাবাদাম, এগুলো ফ্যাট এবং প্রোটিনের ভালো উৎস।
  • তেল: নারকেল তেল, অলিভ তেল ও মাখন শরীরে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যোগ করতে সাহায্য করে। এভাবে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়।

4. শুকনো ফল ও চিনিযুক্ত খাবার:

  • ড্রাইফ্রুটস: ড্রাইফ্রুটস যেমন খেজুর, কিসমিস, আঙ্গুর, এগুলোর মধ্যে প্রচুর ক্যালোরি থাকে এবং তা দ্রুত শরীরে শক্তি যোগ করে।
  • মিষ্টান্ন: চকলেট, মিষ্টি, কেক, পেস্ট্রি ইত্যাদি চিনিযুক্ত খাবারও শরীরে দ্রুত ক্যালোরি যোগ করতে পারে।

5. প্রোটিন শেক ও হেলথ শেক:

বাজারে অনেক ধরনের প্রোটিন শেক বা হেলথ শেক পাওয়া যায় যা শরীরে ক্যালোরি এবং প্রোটিন সরবরাহ করে। এক্সট্রা ক্যালোরি বাড়াতে ওজন বাড়ানোর জন্য এগুলো খুবই কার্যকরী।

  • স্মুদি: দই, ফল, চিনিযুক্ত সিরাপ এবং প্রোটিন পাউডার দিয়ে তৈরি স্মুদি ও শেক শরীরে ক্যালোরি এবং প্রোটিন যোগ করতে সহায়তা করে।

6. দুধ ও দই:

দুধ এবং দই দুটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার, যা ক্যালোরি ও প্রোটিনের ভাল উৎস। দুধে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।

7. ভাত ও রুটি:

পরিমিত পরিমাণে সাদা ভাত এবং আটার রুটি খাওয়া ওজন বাড়ানোর জন্য উপকারী। এগুলোর মধ্যে উচ্চ পরিমাণে শর্করা এবং ক্যালোরি থাকে।

8. সবুজ শাকসবজি:

সবুজ শাকসবজি যেমন ব্রকলি, পালং, গাজর ইত্যাদি শাকসবজি পুষ্টি এবং ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এসব খাবার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।

ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট (Sample Diet Plan):

সকাল (৭:৩০-৮:৩০ AM)

  • ২টি ডিমের অমলেট (ঘি দিয়ে)
  • ২ টুকরো ব্রাউন ব্রেড বা পরোটা
  • ১ গ্লাস দুধ + ১ চামচ মধু
  • এক মুঠো বাদাম

মধ্য সকাল (১১:00 AM)

  • ১ কলা + ১ টেবিল চামচ পিনাট বাটার
  • বা, ফল দিয়ে দই

দুপুর (১:৩০-২:৩০ PM)

  • ২ কাপ ভাত / ৩টি রুটি
  • মাছ/মুরগি/ডাল (প্রোটিন সমৃদ্ধ)
  • সবজি + সালাদ
  • ১ কাপ দই / লাচ্ছি

বিকাল (৪:৩০-৫:00 PM)

  • ওটস + দুধ + মধু
  • বা, চিজ স্যান্ডউইচ

রাত (৮:৩০-৯:৩০ PM)

  • ২ রুটি / ভাত
  • সবজি + ডাল / মাছ
  • ঘি বা তেল দিয়ে রান্না করা খাবার

রাতের শেষে (১০:৩০ PM)

  • ১ গ্লাস গরম দুধ + হলুদ
  • বা, বাদাম দিয়ে খেজুর

ওজন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত টিপস:

১. বারে বারে খান

দিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে খান। একবারে বেশি খেতে না পারলে ছোট ছোট মিল নিন।

২. স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করুন

ওজন বাড়ানোর জন্য শুধু খেলেই হবে না, এক্সারসাইজও জরুরি। ওয়েট লিফটিং, পুশ-আপস, স্কোয়াটস ইত্যাদি করলে পেশি গঠন হবে।

৩. পর্যাপ্ত ঘুমান

ঘুমের সময় শরীর পুনর্গঠন হয়। রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।

৪. স্ট্রেস কম করুন

মানসিক চাপ কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা ওজন কমিয়ে দেয়। মেডিটেশন বা ইয়োগা করুন।

৫. ডাক্তারের পরামর্শ নিন

যদি ডায়েট এবং এক্সারসাইজেও ওজন না বাড়ে, তাহলে এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বা পুষ্টিবিদ দেখান।

কী কী এড়িয়ে চলবেন?

  • জাঙ্ক ফুড – চিপস, বার্গার, কোল্ড ড্রিংকস খেলে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট বাড়ে।
  • অতিরিক্ত চা-কফি – ক্যাফেইন ক্ষুধা কমিয়ে দেয়।
  • খালি পেটে থাকা – লম্বা সময় না খেয়ে থাকবেন না।

মনে রাখবেন:

ওজন বাড়াতে ধৈর্য্য প্রয়োজন। মাসে ১-২ কেজি ওজন বাড়ানোই স্বাস্থ্যকর। দ্রুত ওজন বাড়াতে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি ব্যবহার করবেন না।

উপসংহার:

দ্রুত ওজন বাড়াতে চাইলে সঠিক ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ভালো ঘুম একসাথে মেনে চলুন। উপরের ডায়েট প্ল্যান এবং টিপসগুলো ফলো করুন, আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই ফল পাবেন। যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করুন।

সুস্থ থাকুন, ফিট থাকুন!

Scroll to Top