প্রোজেস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়

প্রোজেস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়? লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসকের পরামর্শ

নারীর শরীর এক অদ্ভুত ও জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আর এই পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকে বিভিন্ন হরমোন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান দুটি হরমোন হলো ইস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (Progesterone)

নারীর মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা এবং সার্বিক সুস্থতার জন্য এই প্রোজেস্টেরন হরমোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে বলা হয় “প্রেগন্যান্সি হরমোন”। সাধারণত আমরা প্রোজেস্টেরন কমে যাওয়ার সমস্যা বা ভুক্তভোগীদের কথাই বেশি শুনি, যার ফলে গর্ভধারণে সমস্যা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন? শরীরে এই হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলেও নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

রোগীরা প্রায় প্রশ্ন করে —“ডাক্তার, আমার খুব ক্লান্ত লাগে, ব্রেস্টে ব্যথা করে এবং মুড সুইং হয়। আমার কি হরমোনের সমস্যা?”

আজকের ব্লগে আমরা বিস্তারিত জানব—প্রোজেস্টেরন হরমোন আসলে কী, এটি বেড়ে গেলে শরীরে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায়, কেন এমন হয় এবং এর প্রতিকার কী।

প্রোজেস্টেরন হরমোন কি? (What is Progesterone?)

প্রোজেস্টেরন হলো একটি স্টেরয়েড হরমোন যা মূলত নারীদের ডিম্বাশয় (Ovaries) থেকে নিঃসৃত হয়। ডিম্বাশয় থেকে প্রতি মাসে যখন ডিম্বাণু বের হয় (Ovulation), তখন সেখানে ‘করপাস লুটিয়াম’ নামে একটি অস্থায়ী গ্রন্থি তৈরি হয়। এই গ্রন্থিটিই প্রোজেস্টেরন তৈরি করে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা (Placenta) এবং সামান্য পরিমাণে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকেও এটি নিঃসৃত হয়।

এর প্রধান কাজগুলো হলো:
১. জরায়ুকে প্রস্তুত করা: ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে সেটি যাতে জরায়ুতে ঠিকমতো গেঁথে যেতে পারে (Implantation), তার জন্য জরায়ুর দেয়ালকে পুরু ও নরম করা।
২. গর্ভাবস্থা রক্ষা করা: গর্ভধারণের পর জরায়ুর সংকোচন বন্ধ রাখা যাতে গর্ভপাত না হয়।
৩. ব্রেস্ট প্রস্তুত করা: প্রসবের পর বুকের দুধ তৈরির জন্য স্তনগ্রন্থিগুলোকে প্রস্তুত করা।
৪. মাসিকচক্র নিয়ন্ত্রণ করা ।

মহিলাদের শরীরে প্রোজেস্টেরন মাসিকচক্রের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ওঠা-নামা করে।
তাই “বেশি” বা “কম”—দুটোই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রোজেস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়:

সাধারণত গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন বাড়াটা স্বাভাবিক এবং জরুরি। কিন্তু গর্ভাবস্থা ছাড়া অন্য সময়ে যদি এই হরমোন বেড়ে যায়, তবে শরীরে নানা অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো অনেকটা PMS (Premenstrual Syndrome) বা মাসিকের আগের লক্ষণগুলোর মতোই।

নিচে প্রধান লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলো:

১. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব (Extreme Fatigue)

প্রোজেস্টেরন মস্তিষ্কের গাবা (GABA) রিসেপ্টরগুলোকে প্রভাবিত করে, যার ফলে ঘুমের উদ্রেক হয়।

  • বিবরণ: হরমোন বেড়ে গেলে আপনি সারাদিন ক্লান্ত বোধ করবেন। পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরেও মনে হবে শরীর চলছে না। সব সময় শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করবে।

২. স্তনে ব্যথা বা ফোলা ভাব (Breast Tenderness)

এটি প্রোজেস্টেরন বাড়ার অন্যতম সাধারণ লক্ষণ।

  • বিবরণ: ব্রেস্ট বা স্তন ভারী মনে হতে পারে, হাত দিলে ব্যথা লাগতে পারে এবং আকার কিছুটা স্ফীত হতে পারে। মাসিকের আগে অনেক নারীর এমন হয়, কারণ তখন শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই প্রোজেস্টেরন বাড়ে।

৩. পেটে গ্যাস ও ফোলা ভাব (Bloating)

  • বিবরণ: প্রোজেস্টেরন অন্ত্রের (Intestine) গতি কমিয়ে দেয়। ফলে খাবার হজম হতে সময় নেয়। এতে পেটে গ্যাস জমে, পেট ফেঁপে থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) দেখা দেয়। মনে হয় যেন অনেক খেয়ে ফেলেছেন, অথচ হয়তো আপনি কিছুই খাননি।

৪. মুড সুইং ও ডিপ্রেশন (Mood Swings)

হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে মনের ওপর তার সরাসরি প্রভাব পড়ে।

  • বিবরণ: অকারণে কান্না পাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, উদ্বেগ (Anxiety) বা ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে। কখনো খুব ভালো লাগছে, আবার পরক্ষণেই খুব খারাপ লাগছে—এমন হতে পারে।

৫. যৌন অনিহা (Low Libido)

  • বিবরণ: প্রোজেস্টেরন বেড়ে গেলে যৌন মিলনের আকাঙ্ক্ষা বা লিবিডো কমে যেতে পারে। অনেক সময় যোনিপথ শুষ্ক (Vaginal Dryness) হয়ে যায়, যার ফলে মিলনে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।

৬. ওজন বৃদ্ধি (Weight Gain)

যদিও এটি সরাসরি চর্বি বাড়ায় না, তবে শরীরে পানি ধরে রাখার (Water Retention) প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীর ফোলা ফোলা লাগে এবং ওজন মেশিনে ওজন বেশি দেখায়।

৭. মাথা ঘোরা (Dizziness)

প্রোজেস্টেরন রক্তনালীগুলোকে শিথিল বা প্রসারিত করে দেয়। ফলে রক্তচাপ কিছুটা কমে যেতে পারে, যার কারণে মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম ভাব হতে পারে।

৮. ত্বকের সমস্যা (Skin Issues)

কিছু ক্ষেত্রে প্রোজেস্টেরন বাড়লে ত্বকে তেল চিটচিটে ভাব বাড়ে এবং ব্রণের (Acne) সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ:

✔ ত্বকে র‍্যাশ
✔ পানি ধরে রাখা (Water retention)
✔ হাত-পা ফুলে যাওয়া
✔ উত্তেজনা বা স্ট্রেস
✔ মাথা ঘোরা
✔ শরীর গরম লাগা
✔ চুল পড়া

যদি এসব লক্ষণ দীর্ঘদিন থাকে, তবে হরমোন টেস্ট জরুরি।

প্রোজেস্টেরন হরমোন বাড়ার কারণ (Why Progesterone Gets High)

এখন প্রশ্ন হলো, স্বাভাবিক অবস্থার বাইরে এই হরমোন কেন বাড়ে? এর পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:

১. গর্ভাবস্থা (Pregnancy) – স্বাভাবিক কারণ

এটি হলো প্রোজেস্টেরন বাড়ার সবচেয়ে সাধারণ এবং “ভালো” কারণ। গর্ভধারণ করলে শরীর প্লাসেন্টা তৈরির আগ পর্যন্ত ডিম্বাশয় থেকে এবং পরে প্লাসেন্টা থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রোজেস্টেরন তৈরি করে। গর্ভাবস্থায় এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এটি বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্য জরুরি।

২. ডিম্বাশয়ের সিস্ট (Ovarian Cysts)

ডিম্বাশয়ে যদি কোনো সিস্ট থাকে, বিশেষ করে ‘করপাস লুটিয়াম সিস্ট’, তবে সেটি অপ্রয়োজনীয়ভাবে অতিরিক্ত প্রোজেস্টেরন তৈরি করতে পারে।

৩. কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া (CAH)

এটি একটি জন্মগত বা জেনেটিক সমস্যা। এতে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি (যা কিডনির ওপরে থাকে) হরমোন উৎপাদনে গোলমাল করে। এর ফলে প্রোজেস্টেরন লেভেল অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের হতে পারে।

৪. মোলার প্রেগন্যান্সি (Molar Pregnancy)

এটি একটি অস্বাভাবিক গর্ভাবস্থা যেখানে জরায়ুতে ভ্রূণের বদলে টিউমারের মতো টিস্যু বড় হতে থাকে। এই অবস্থায় প্রোজেস্টেরন লেভেল খুব বেশি থাকে।

৫. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Medications)

যারা গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন, তাদের অনেক সময় ডাক্তাররা প্রোজেস্টেরন সাপ্লিমেন্ট (পিল বা ইনজেকশন) দেন। অতিরিক্ত মাত্রায় এই ঔষধ সেবন করলে রক্তে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) বা কিছু জন্মবিরতিকরণ পিলও এর কারণ হতে পারে।

৬. অ্যাড্রিনাল ক্যানসার (Adrenal Cancer)

খুব বিরল ক্ষেত্রে, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির টিউমার বা ক্যানসার হলে প্রোজেস্টেরন লেভেল অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে।

৭. ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট

অনেক চিকিৎসায় Progesterone injections / capsules দেওয়া হয়।

৮. Stress ও Lifestyle সমস্যা

চাপ বেশি → হরমোন ব্যালান্স নষ্ট → প্রোজেস্টেরন ওঠানামা করে।

প্রোজেস্টেরন লেভেল পরীক্ষা (Progesterone Test)

লক্ষণগুলো দেখে সন্দেহ হলে ডাক্তাররা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা (Serum Progesterone Test) দেন।

কখন পরীক্ষা করতে হয়? নারীদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষার টাইমিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পুরো মাসজুড়ে এই হরমোনের লেভেল এক থাকে না।

  • মাসিকের পর পর এর লেভেল কম থাকে।
  • ওভুলেশন বা ডিম্বাণু বের হওয়ার পর (মাসিক চক্রের ১৪-২১ তম দিনে) এর লেভেল সবচেয়ে বেশি থাকে।
  • তাই সাধারণত মাসিকের ২১তম দিনে (Day 21 Progesterone Test) এই পরীক্ষাটি করতে বলা হয়।

স্বাভাবিক মাত্রা (Normal Range): (ল্যাবরেটরি ভেদে এটি সামান্য কমবেশি হতে পারে)

  • মাসিকের শুরুতে (Follicular phase): ০.১ – ১.৫ ng/mL
  • ডিম্বাণু বের হওয়ার পর (Luteal phase): ২ – ২৫ ng/mL
  • গর্ভাবস্থায় (Pregnancy):
    • প্রথম ট্রাইমেস্টার: ১০ – ৪৪ ng/mL
    • দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার: ১৯.৫ – ৮২.৫ ng/mL
    • তৃতীয় ট্রাইমেস্টার: ৬৫ – ২৯০ ng/mL
  • মেনোপজের পর: ০.২ ng/mL এর কম।

প্রোজেস্টেরন বেড়ে গেলে কী কী ক্ষতি হতে পারে?

✔ মাসিকচক্রের অনিয়ম
✔ গর্ভধারণে সমস্যা
✔ ত্বকের সমস্যা
✔ হরমোনাল অ্যাকনে
✔ ওজন বৃদ্ধি
✔ মানসিক চাপ
✔ IBS বা হজম সমস্যা বাড়া

দীর্ঘমেয়াদি হলে হরমোনাল থেরাপি কিংবা চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

প্রোজেস্টেরন বেড়ে গেলে করণীয় ও চিকিৎসা (Treatment)

প্রোজেস্টেরন বেড়ে গেলে তার চিকিৎসা নির্ভর করে মূল কারণের ওপর। ডাক্তাররা সাধারণত নিচের পদক্ষেপগুলো নেন:

১. কারণ চিহ্নিত করা

যদি গর্ভাবস্থার কারণে বাড়ে, তবে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই; এটি একটি সুখবর। কিন্তু যদি সিস্ট বা টিউমারের কারণে হয়, তবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়।

২. ঔষধ পরিবর্তন

যদি আপনি হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) বা প্রোজেস্টেরন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন এবং লক্ষণগুলো তীব্র হয়, তবে ডাক্তার আপনার ঔষধের ডোজ কমিয়ে দিতে পারেন বা ঔষধ পরিবর্তন করতে পারেন।

৩. মেনোপজকালীন চিকিৎসা

মেনোপজের সময় অনেক নারী হরমোন থেরাপি নেন। যদি প্রোজেস্টেরন বেড়ে যায়, তবে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের কম্বিনেশন পরিবর্তন করা হয়।

প্রাকৃতিক উপায়ে হরমোন নিয়ন্ত্রণের উপায় (Natural Ways to Balance Hormones)

যদি কোনো গুরুতর রোগ না থাকে এবং সামান্য হরমোন ইমব্যালেন্স থাকে, তবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন:

১. স্ট্রেস কমান (Manage Stress)

দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বাড়লে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের ওপর প্রভাব পড়ে। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা পছন্দের কাজ করে মন ভালো রাখুন।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণ (Weight Management)

অতিরিক্ত চর্বি হরমোন উৎপাদনের কারখানা হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন বেড়ে গেলে প্রোজেস্টেরনের সাথে ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করে ওজন স্বাভাবিক রাখুন।

৩. সুষম খাদ্য (Healthy Diet)

  • ফাইবার: শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার হরমোন মেটাবলিজমে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন বি ও সি: এগুলো হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • দুগ্ধজাত খাবার ও সয়া: অতিরিক্ত সয়াবিন বা প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো হরমোনে প্রভাব ফেলতে পারে।

৪. লিভারের যত্ন নিন

আমাদের শরীরের হরমোনগুলো ব্যবহারের পর লিভারের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। লিভার সুস্থ না থাকলে রক্তে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রচুর পানি পান করুন এবং অ্যালকোহল বর্জন করুন।

প্রোজেস্টেরন হরমোন নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রোজেস্টেরন বাড়লে কি বাচ্চা নষ্ট হয়?

উত্তর: না, বরং উল্টো। প্রোজেস্টেরন গর্ভাবস্থা টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। প্রোজেস্টেরন কমে গেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে। তবে মোলার প্রেগন্যান্সি বা অস্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় এটি অতিরিক্ত বাড়তে পারে, যা চিকিৎসার প্রয়োজন।

প্রোজেস্টেরন বাড়লে কি ক্যান্সার হয়?

উত্তর: সাধারণত প্রোজেস্টেরন বাড়লে ক্যান্সার হয় না। তবে কিছু বিরল ক্যান্সার (যেমন অ্যাড্রিনাল ক্যান্সার) হলে এই হরমোন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী হরমোন থেরাপি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়াতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া হরমোন ঔষধ খাওয়া ঠিক নয়।

পুরুষদের কি প্রোজেস্টেরন বাড়ে?

উত্তর: পুরুষদের শরীরেও সামান্য প্রোজেস্টেরন থাকে যা টেস্টোস্টেরন তৈরিতে সাহায্য করে। খুব বিরল ক্ষেত্রে অ্যাড্রিনাল টিউমার হলে পুরুষদেরও এই হরমোন বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি এবং যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কখন অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন?

যদি—

  • মাসিক অনেকদিন অনিয়মিত থাকে

  • স্তন ব্যথা খুব বেশি হয়

  • গর্ভধারণে সমস্যা হয়

  • খুব ঘন ঘন মাথাব্যথা হয়

  • ওজন দ্রুত বাড়ে

  • মুড সুইং বেশি

তাহলে অবশ্যই গাইনোকোলজিস্ট বা এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট দেখানো জরুরি।

উপসংহার:

প্রোজেস্টেরন হরমোন নারীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গর্ভাবস্থায় এটি আশীর্বাদ, কিন্তু অন্য সময়ে এর আধিক্য বিরক্তির কারণ হতে পারে।

আপনি যদি দেখেন যে আপনার অকারণে ক্লান্তি লাগছে, ব্রেস্টে ব্যথা হচ্ছে, মুড সুইং হচ্ছে বা মাসিক অনিয়মিত হচ্ছে—তবে অবহেলা করবেন না। নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে ঔষধ না কিনে একজন গাইনোকোলজিস্ট বা হরমোন বিশেষজ্ঞের (Endocrinologist) পরামর্শ নিন। একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষাই পারে আপনার দুশ্চিন্তা দূর করতে।

শরীর আপনার, তাই এর প্রতিটি সংকেত বুঝুন এবং সুস্থ থাকুন। সচেতনতাই সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।

(বিঃদ্রঃ এই ব্লগটি সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতা ও তথ্যের জন্য লেখা হয়েছে। আপনার যদি গুরুতর শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)

Scroll to Top