বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয় কি?

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাল ইনফেকশন, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি শিশুদের ক্ষেত্রে গুরুতর হতে পারে, বিশেষ করে যদি সঠিক সময়ে এটি শনাক্ত না করা হয়। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল হওয়ায় ডেঙ্গু তাদের শরীরে দ্রুত প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বুঝতে এবং সময়মতো ব্যবস্থা নিতে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণ:

শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক এবং উন্নত লক্ষণগুলো ভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। নিচে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

১. প্রাথমিক লক্ষণ (Mild Dengue Fever):

  • উচ্চ জ্বর:
    বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত হঠাৎ করে শুরু হয় এবং তাপমাত্রা ১০২-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে।
  • শরীর ও হাড়ের ব্যথা:
    বাচ্চারা প্রায়ই পুরো শরীর, বিশেষ করে হাড় ও পেশিতে ব্যথার কথা বলে।
  • মাথাব্যথা:
    মাথার সামনের দিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
  • চোখের পিছনে ব্যথা:
    শিশুদের চোখের পিছনে ব্যথার অনুভূতি হতে পারে, যা তারা প্রকাশ করতে অসুবিধা বোধ করতে পারে।
  • ক্ষুধামন্দা:
    বাচ্চারা খেতে অরুচি প্রকাশ করে, এবং এর সাথে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
  • ত্বকে র‍্যাশ:
    শরীরে লালচে দাগ বা র‍্যাশ দেখা দেয়, যা পরে আরও স্পষ্ট হতে পারে।

২. মধ্যম পর্যায়ের লক্ষণ (Dengue Hemorrhagic Fever):

যদি ডেঙ্গু রোগটি আরও গুরুতর হয়, তবে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

  • রক্তপাত:
    নাক, মাড়ি বা ত্বকের নিচে রক্তপাত হতে পারে।
  • শরীর ফুলে যাওয়া:
    শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফুলে যাওয়া বা তরল জমা হতে পারে।
  • ত্বকে লালচে দাগ:
    র‍্যাশ আরও তীব্র হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
  • প্লেটলেট কমে যাওয়া:
    বাচ্চার রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা দ্রুত কমে যেতে পারে, যা শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

৩. গুরুতর লক্ষণ (Dengue Shock Syndrome):

এটি ডেঙ্গুর সবচেয়ে বিপজ্জনক রূপ এবং অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হলে জীবন হানির ঝুঁকি থাকে। লক্ষণগুলি হলো:

  • রক্তচাপ কমে যাওয়া:
    বাচ্চার রক্তচাপ হঠাৎ করে খুব কমে যায়, যা শক সৃষ্টি করতে পারে।
  • ঠান্ডা হাত ও পা:
    শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ায় বাচ্চার হাত-পা ঠান্ডা হতে পারে।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া:
    মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণে বাচ্চা দুর্বল হয়ে পড়ে বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
  • পেটে ব্যথা:
    তীব্র পেট ব্যথার সঙ্গে বমি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ শনাক্ত করার উপায়:

ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো প্রায়ই অন্যান্য সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মতো মনে হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক পরীক্ষা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরীক্ষার ধরণ:

  • NS1 Antigen Test:
    ডেঙ্গু ভাইরাস সনাক্ত করার জন্য এটি জ্বরের প্রথম ১-৫ দিনের মধ্যে করা হয়।
  • প্লেটলেট কাউন্ট:
    রক্তের প্লেটলেট সংখ্যা কমে যাওয়া ডেঙ্গুর একটি সাধারণ লক্ষণ।
  • ডেঙ্গু ইলাইজা টেস্ট:
    ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিবডি সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু হলে কী করবেন:

ডেঙ্গু জ্বরের সময় শিশুদের চিকিৎসা সঠিকভাবে করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে যা করবেন:

  1. পানিশূন্যতা রোধ করুন:
    • বাচ্চাকে প্রচুর পানি, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন এবং তরল খাবার খাওয়ান।
  2. জ্বর নিয়ন্ত্রণ করুন:
    • প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বা সিরাপ ব্যবহার করুন।
    • অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  3. বিশ্রাম নিশ্চিত করুন:
    • বাচ্চাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে।
  4. প্লেটলেট পর্যবেক্ষণ করুন:
    • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করান।
  5. মশার কামড় থেকে রক্ষা করুন:
    • মশারি ব্যবহার করুন এবং মশারোধক ক্রিম ব্যবহার করুন।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে যা করবেন না:

  • বাচ্চাকে বাইরে খেলতে বা মশার সংস্পর্শে যেতে দেবেন না।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার করবেন না।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়:

ডেঙ্গু প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। বাচ্চাদের মশার কামড় থেকে বাঁচাতে নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন:

  • মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা:
    বাড়ির চারপাশে মশার জন্মস্থান বন্ধ করুন।
  • পোশাক:
    বাচ্চাদের এমন পোশাক পরান, যা পুরো শরীর ঢেকে রাখে।
  • মশারোধক ক্রিম:
    মশারোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
  • জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন:
    বালতি, টব, পাত্র বা ফুলের টবের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

ডেঙ্গু একটি জরুরি চিকিৎসাজনিত অবস্থা, তাই কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান। বিশেষ করে, যদি বাচ্চার জ্বরের সঙ্গে রক্তপাত, তীব্র ব্যথা বা শারীরিক দুর্বলতা দেখা যায়, তবে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।

সঠিক চিকিৎসা এবং সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাচ্চাদের ডেঙ্গু থেকে সুস্থ করা সম্ভব। সতর্কতা এবং সচেতনতাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।

Scroll to Top