ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ কি

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ কি? এর কারণ, ধরণ ও প্রতিকার

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ নারীদের জন্য একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটি যোনি পরিষ্কার রাখার এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অনেক নারী এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, বিশেষ করে যখন ডিসচার্জের পরিমাণ বা রং পরিবর্তন হয়। আজ আমরা বিস্তারিত জানবো ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ সম্পর্কে, এর কারণ, ধরণ এবং কখন এটি সমস্যা হতে পারে।

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ কি?

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হল যোনি থেকে বের হওয়া তরল যা মৃত কোষ ও ব্যাকটেরিয়াকে দূর করে। এটি সাধারণত স্বচ্ছ বা সাদা রঙের হয়ে থাকে এবং এতে কোনো অস্বস্তি বা দুর্গন্ধ থাকে না। এটি যোনির স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি যোনিপথকে আর্দ্র ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক ডিসচার্জের পার্থক্য:

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে – স্বাভাবিক (ফিজিওলজিক্যাল) এবং অস্বাভাবিক (প্যাথোলজিক্যাল)।

স্বাভাবিক ডিসচার্জের বৈশিষ্ট্য:

✔ স্বচ্ছ, দুধের মতো সাদা বা হালকা হলুদ রঙের হতে পারে।
✔ কোনো দুর্গন্ধ থাকে না।
✔ এটি মাসিক চক্রের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে।
✔ যৌন উত্তেজনা বা ওভুলেশনের সময় এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
✔ গর্ভধারণের সময় ডিসচার্জ কিছুটা বেশি হতে পারে।

অস্বাভাবিক ডিসচার্জের লক্ষণ:

✖ দুর্গন্ধযুক্ত বা মাছের গন্ধযুক্ত হতে পারে।
✖ রঙ সবুজ, ধূসর, বাদামী বা গাঢ় হলুদ হতে পারে।
✖ খুব বেশি পরিমাণে হতে পারে।
✖ চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা ব্যথার সঙ্গে থাকতে পারে।
✖ যৌন মিলনের সময় ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের কারণ:

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ সাধারণত স্বাভাবিক হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি সংক্রমণের কারণে হতে পারে। আসুন জেনে নিই এর কয়েকটি সাধারণ কারণ:

১. হরমোনের পরিবর্তন:

মাসিক চক্র, গর্ভধারণ এবং মেনোপজের সময় হরমোন পরিবর্তনের কারণে ডিসচার্জের পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে।

২. সংক্রমণ (ইনফেকশন):

বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে ডিসচার্জ অস্বাভাবিক হতে পারে।
ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (BV) – ডিসচার্জ ধূসর বা সাদা এবং মাছের গন্ধযুক্ত হয়।
ইস্ট ইনফেকশন (Candida Infection) – ডিসচার্জ সাদা, ঘন এবং দইয়ের মতো হয়, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থাকতে পারে।
ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis) – ডিসচার্জ হলুদ-সবুজ, ফেনার মতো ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (STI) – ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া এবং হারপিসের কারণে অস্বাভাবিক ডিসচার্জ হতে পারে।

৩. যোনির সংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি:

কিছু নারী সাবান, পারফিউমযুক্ত প্যাড, ট্যাম্পন বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে পারেন, যা ডিসচার্জ বাড়াতে পারে।

৪. গর্ভধারণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:

গর্ভধারণের প্রথম দিকে ডিসচার্জ বৃদ্ধি পেতে পারে। আবার, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ও ইনজেকশনের কারণেও ডিসচার্জের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।

৫. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির অভাব:

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে, যা অস্বাভাবিক ডিসচার্জের কারণ হতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখানো উচিত?

যদি আপনার ডিসচার্জ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত হয়, বা চুলকানি, ব্যথা ও জ্বালাপোড়ার সঙ্গে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ প্রতিরোধের উপায়:

ভ্যাজাইনাল স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা জরুরি:
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন – প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে যোনি পরিষ্কার করুন। সুগন্ধি সাবান বা কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না।
সঠিক আন্ডারওয়্যার পরুন – সুতির অন্তর্বাস পরুন এবং তা নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন – কারণ এটি যোনির উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস করতে পারে।
সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখুন – কনডম ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন – দই ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খান, যা যোনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
অতিরিক্ত ডুচিং (Douching) করবেন না – এটি যোনির প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

উপসংহার:

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ একটি স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তবে, যদি এটি অস্বাভাবিক মনে হয় বা এর সঙ্গে অস্বস্তি, চুলকানি, দুর্গন্ধ বা ব্যথা থাকে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সচেতনতা ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ থাকে না।

Scroll to Top