
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং কি?
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং বলতে সাধারণত যোনিপথ থেকে রক্তপাত হওয়াকে বোঝায়। এটি স্বাভাবিক হতে পারে, আবার কোনো শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে। আজ আমরা বিস্তারিত জানবো ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং কী, কখন স্বাভাবিক এবং কখন এটি চিন্তার বিষয় হতে পারে।
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং কাকে বলে?
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং হল যোনিপথ থেকে রক্তপাত হওয়া। এটি সাধারণত মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ডের সময় ঘটে থাকে। কিন্তু যদি মাসিকের সময়ের বাইরে, গর্ভাবস্থায়, মেনোপজের পর বা অস্বাভাবিক পরিমাণে রক্তপাত হয়, তাহলে এটি একটি চিকিৎসাগত সমস্যা হতে পারে।
স্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং কখন হয়?
১. মাসিক চক্র (Menstrual Cycle): সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের ব্যবধানে পিরিয়ড হয় এবং এটি ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
২. গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে: অনেক মহিলার গর্ভধারণের শুরুতে কিছুটা রক্তপাত হয়, যা ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং নামে পরিচিত।
৩. গর্ভনিরোধক পিল গ্রহণের ফলে: কিছু মহিলা নতুন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের পর হালকা রক্তপাত অনুভব করতে পারেন।
অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং কখন হতে পারে?
১. মাসিকের বাইরে ব্লিডিং হলে: যদি মাসিক চক্রের মাঝখানে বা অপ্রত্যাশিত সময়ে রক্তপাত হয়, তবে এটি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
২. গর্ভাবস্থায় অস্বাভাবিক রক্তপাত: গর্ভাবস্থার যে কোনো পর্যায়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩. মেনোপজের পর ব্লিডিং: মেনোপজের পর আবার রক্তপাত হলে এটি জরুরি চিকিৎসার বিষয় হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত বা দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত: যদি রক্তপাত খুব বেশি হয় বা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দিন ধরে স্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিংয়ের কারণসমূহ:
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিংয়ের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এগুলোর মধ্যে কিছু স্বাভাবিক আবার কিছু চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
১. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
- থাইরয়েড সমস্যা
- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
২. গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত কারণ:
- গর্ভপাতের আশঙ্কা
- অ্যাক্টোপিক প্রেগনেন্সি (গর্ভাশয়ের বাইরে ভ্রূণ বেড়ে ওঠা)
৩. সংক্রমণ:
- ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল সংক্রমণ
- যৌন সংক্রমণ (STI)
৪. গর্ভাশয় বা জরায়ুর সমস্যা:
- জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা পলিপ
- এন্ডোমেট্রিওসিস
- জরায়ুর ক্যান্সার
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার?
আপনার যদি নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- মাসিকের বাইরেও নিয়মিত রক্তপাত হলে
- অতিরিক্ত ভারী বা দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত হলে
- গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের ব্লিডিং হলে
- যৌন সম্পর্কের পর রক্তপাত হলে
- ব্লিডিংয়ের সাথে তীব্র পেট ব্যথা থাকলে
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং নির্ণয় ও চিকিৎসা:
চিকিৎসক সাধারণত রোগীর উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা এবং কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার কারণ নির্ণয় করেন। নিচে কিছু সাধারণ পরীক্ষা দেওয়া হলো:
- আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান – জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়।
- প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট – জরায়ুর ক্যান্সার বা সংক্রমণ পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
- হরমোন টেস্ট – শরীরে হরমোনের ভারসাম্য পরীক্ষা করতে করা হয়।
- বায়োপসি – জরায়ুর টিস্যু পরীক্ষা করে ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে কিনা দেখা হয়।
চিকিৎসার পদ্ধতি
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিংয়ের চিকিৎসা এর কারণের উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:
- ওষুধ:
- হরমোন থেরাপি
- সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক
- ব্যথা কমানোর ওষুধ
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি পরিবর্তন: যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা অন্য কোনো পদ্ধতি ব্লিডিংয়ের কারণ হয়, তবে চিকিৎসক বিকল্প পরামর্শ দিতে পারেন।
- সার্জারি:
- জরায়ুর পলিপ বা ফাইব্রয়েড অপসারণ
- জরায়ুর ক্যান্সার থাকলে অস্ত্রোপচার
উপসংহার:
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং অনেক কারণে হতে পারে, যার মধ্যে কিছু স্বাভাবিক, আবার কিছু চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বোঝায়। যদি অস্বাভাবিক রক্তপাত হয় বা এটি নিয়ে আপনার সন্দেহ থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে অনেক জটিল সমস্যা এড়ানো সম্ভব।