মাসিকের সময় সহবাস করলে কি হয়
মাসিকের সময় সহবাস করা একটি বিতর্কিত এবং সংবেদনশীল বিষয়। অনেকেই এর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিছু মানুষের জন্য এটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য, আবার অনেকের জন্য এটি একটি অস্বস্তিকর এবং সাংস্কৃতিকভাবে নিষিদ্ধ বিষয়। মাসিকের সময় সহবাসের বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং এর ভালো ও খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। মাসিকের সময় সহবাস করলে কি হয় নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মাসিকের সময় সহবাস করা কি নিরাপদ?
মাসিকের সময় সহবাস সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু শর্ত এবং সতর্কতা মেনে চলা উচিত। মাসিকের সময় শরীরে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, যা যৌনসম্পর্কের অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই সময় গর্ভাশয়ের মুখ কিছুটা খোলা থাকে এবং শরীর থেকে রক্ত বের হয়। ফলে মাসিকের সময় সহবাস করলে কি হয়, এই সময়ে সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
মাসিকের সময় যৌন সম্পর্কের সম্ভাব্য ঝুঁকি:
- ইনফেকশন বা সংক্রমণের ঝুঁকি:
- মাসিকের সময় গর্ভাশয়ের মুখ খোলা থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- এই সময় যদি সঠিক সুরক্ষা না নেওয়া হয়, তবে যৌনবাহিত রোগ (STD) হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- যেমন: এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি বা সি।
- ইউটিআই (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন):
- মাসিকের সময় সহবাসের কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকিও কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
- অস্বস্তি বা ব্যথা:
- অনেক মহিলার মাসিক চলাকালীন তলপেটে ব্যথা হয়। এই সময় সহবাস করলে তা আরও বেড়ে যেতে পারে।
- রক্তপাতের কারণে অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।
মাসিকের সময় সহবাসের সম্ভাব্য উপকারিতা:
যদিও মাসিকের সময় সহবাসে কিছু ঝুঁকি রয়েছে, তবুও কিছু মহিলার জন্য এটি আরামদায়ক বা উপকারী হতে পারে।
- পিরিয়ড পেইন কমাতে সাহায্য:
- সহবাসের সময় অর্গ্যাজম হলে, শরীরে এন্ডরফিন নামক হরমোন নিঃসরণ হয়। এটি প্রাকৃতিক পেইনকিলার হিসেবে কাজ করে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- স্ট্রেস কমানো:
- সহবাস একটি মানসিক রিলিফ প্রদান করতে পারে, যা মাসিক চলাকালীন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- প্রাকৃতিক লুব্রিকেশন:
- মাসিক চলাকালীন রক্ত প্রাকৃতিক লুব্রিক্যান্ট হিসেবে কাজ করে, যা যৌন সম্পর্ককে আরামদায়ক করতে পারে।
সুরক্ষার উপায়:
মাসিকের সময় সহবাস করলে কিছু সতর্কতা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে সংক্রমণ এবং অন্যান্য ঝুঁকি কমানো যায়।
- কন্ডোম ব্যবহার করুন:
- কন্ডোম যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- এটি রক্তের মাধ্যমে ছড়ানো রোগের ঝুঁকিও কমায়।
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
- সহবাসের আগে এবং পরে যৌনাঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।
- এই সময় অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
- সহবাসের জায়গা ঠিক করুন:
- রক্তপাতের কারণে বিছানা বা কাপড় নোংরা হতে পারে, তাই একটি পুরনো তোয়ালে বা ডিসপোজেবল চাদর ব্যবহার করা ভালো।
- সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন:
- মাসিকের সময় সহবাস করার আগে সঙ্গীর মতামত জানা গুরুত্বপূর্ণ। উভয়ের জন্য আরামদায়ক না হলে সহবাস থেকে বিরত থাকা ভালো।
গর্ভধারণের সম্ভাবনা:
মাসিকের সময় সহবাসের সময় অনেকেই মনে করেন গর্ভধারণ অসম্ভব। তবে এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। কিছু ক্ষেত্রে গর্ভধারণ সম্ভব হতে পারে।
- যদি কারও ছোট চক্র (২১-২৪ দিন) হয় এবং মাসিকের শেষের দিকে সহবাস করা হয়, তাহলে স্পার্ম (যা ৫ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে) ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারে। এর ফলে গর্ভধারণ হতে পারে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি:
অনেক সংস্কৃতিতে মাসিকের সময় সহবাস নিষিদ্ধ বা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়। এটি প্রায়ই ধর্মীয় বা সামাজিক বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে এটি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং প্রত্যেকের জন্য অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে।
- ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ:
- কিছু ধর্ম মাসিকের সময় সহবাস নিষিদ্ধ করেছে। যেমন: ইসলাম ধর্মে এটি হারাম বলে বিবেচিত।
- হিন্দু ধর্মেও মাসিকের সময় মহিলাদের অনেক ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
- সামাজিক ট্যাবু:
- অনেক সমাজে মাসিক একটি ট্যাবু বিষয়, যা খোলামেলা আলোচনার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ:
মাসিকের সময় সহবাসের ফলে যদি কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা বা অস্বস্তি দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিছু সম্ভাব্য পরিস্থিতি যেখানে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা উচিত:
- সহবাসের পর অতিরিক্ত রক্তপাত হলে।
- যৌনাঙ্গে চুলকানি বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে।
- দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব হলে।
উপসংহার:
মাসিকের সময় সহবাস করা একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এটি শারীরিকভাবে নিরাপদ হলেও কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে। সঠিক সুরক্ষা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে মাসিকের সময় সহবাস করলে কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে এই বিষয়ে সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করা এবং উভয়ের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। মাসিকের সময় সহবাসের বিষয়ে যে কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।