মাসিকের সময় সহবাস করলে বাচ্চা হয় কিনা

মাসিকের সময় সহবাস করলে বাচ্চা হয় কিনা? আসুন জেনে নেই

মাসিক বা পিরিয়ডের সময় যৌন সম্পর্ক নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন এবং বিভ্রান্তি রয়েছে। এর মধ্যে একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো: মাসিকের সময় সহবাস করলে কি গর্ভধারণ সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই নির্ভর করে শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম এবং বিভিন্ন পরিস্থিতির ওপর। এই আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মাসিক কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

মাসিক (মেনস্ট্রুয়েশন) হলো মহিলাদের প্রজনন প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ। সাধারণত মাসিক চক্র ২৮-৩৫ দিনের মধ্যে ঘটে, তবে এটি মহিলাভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।

মাসিক চক্রের প্রধান অংশগুলো হলো:

  1. মেনস্ট্রুয়াল ফেজ (১-৫ দিন): এই সময়ে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ আস্তরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) ক্ষয় হয় এবং রক্তের আকারে শরীর থেকে বের হয়ে আসে।
  2. ফলিকুলার ফেজ (৬-১৪ দিন): ডিম্বাণু প্রস্তুত হয় এবং শরীর গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হয়।
  3. অভুলেশন ফেজ (প্রায় ১৪তম দিন): ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হয়। এই সময়ে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সর্বাধিক।
  4. লুটিয়াল ফেজ (১৫-২৮ দিন): ডিম্বাণুটি নিষিক্ত না হলে, এটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় এবং মাসিক চক্র আবার শুরু হয়।

মাসিকের সময় গর্ভধারণের সম্ভাবনা:

মাসিকের সময় গর্ভধারণ সাধারণত কম সম্ভাবনাপূর্ণ, তবে এটি অসম্ভব নয়। কেন? নিচে এর কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:

১. ডিম্বাণুর স্থায়িত্ব এবং শুক্রাণুর দীর্ঘায়ু

  • ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত হওয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকে।
  • শুক্রাণু মহিলা শরীরে ৩-৫ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে।
  • যদি কোনও মহিলার মাসিক চক্র খুবই ছোট (যেমন ২১ দিন) এবং মাসিকের শেষ দিনগুলোর মধ্যে শুক্রাণু শরীরে উপস্থিত থাকে, তাহলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থেকে যায়।

২. অনিয়মিত মাসিক চক্র

  • অনেক মহিলার মাসিক চক্র নিয়মিত নয়।
  • যদি ডিম্বাণু নির্ধারিত সময়ের আগে মুক্ত হয়, তখন মাসিকের সময় সহবাসের ফলে শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয়ে গর্ভধারণ ঘটাতে পারে।

৩. মাসিক চলাকালীন অভুলেশন

  • কিছু মহিলার মাসিকের সময়ও অভুলেশন হতে পারে, যদিও এটি বিরল।
  • এ ধরনের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে।

মাসিকের সময় সহবাস: সুবিধা এবং ঝুঁকি

সুবিধা

  1. ব্যথা উপশম: মাসিক চলাকালীন যৌন সম্পর্ক অনেক মহিলার ক্ষেত্রে মাসিকজনিত ব্যথা বা ক্র্যাম্প কমাতে পারে।
  2. বাধাহীনতা: এই সময় অনেক মহিলার লিবিডো বৃদ্ধি পায়, যা যৌন তৃপ্তি বাড়াতে সহায়ক।

ঝুঁকি

  1. সংক্রমণের ঝুঁকি: মাসিকের সময় জরায়ুর মুখ খোলা থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া বা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
  2. বিষণ্নতা: মাসিকের সময় রক্ত প্রবাহ থাকার কারণে যৌন সম্পর্ক কিছু মানুষের কাছে অস্বস্তিকর বা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে।
  3. যৌনরোগের (STI) সম্ভাবনা: মাসিকের সময় যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

সহবাসের সময় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করুন:

কনডম ব্যবহার:

  • মাসিকের সময় যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনডম ব্যবহার করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যে নিয়ে আসা যায়।
  • এটি যৌন সংক্রমণ থেকেও সুরক্ষা দেয়।

পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:

  • মাসিকের সময় সহবাসের আগে এবং পরে উভয়কেই পরিষ্কার থাকা জরুরি।
  • পরিষ্কার তোলা কাপড় বা তোয়ালে ব্যবহার করুন।

গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমানোর উপায়:

  1. কনডম ব্যবহার: এটি সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি।
  2. জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি: এটি ডিম্বাণু মুক্ত হওয়া রোধ করে।
  3. ক্যালেন্ডার পদ্ধতি: মাসিক চক্রের অভুলেশন সময় ট্র্যাক করুন এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন।

মিথ্যা এবং বাস্তবতা:

মিথ্যা ১: মাসিকের সময় সহবাস করলে গর্ভধারণ হয় না।

বাস্তবতা: এটি ভুল ধারণা। যদিও মাসিকের সময় গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম, তবে এটি সম্পূর্ণ অসম্ভব নয়।

মিথ্যা ২: মাসিকের সময় সহবাস করা অনৈতিক।

বাস্তবতা: এটি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। কোনও ধর্ম বা সংস্কৃতির নিয়মে এটি নিষিদ্ধ হতে পারে, তবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অনৈতিক নয়।

মাসিকের সময় সহবাসের জন্য টিপস:

  1. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিন।
  2. যৌন সম্পর্কের জন্য একটি আরামদায়ক এবং হাইজিনিক স্থান বেছে নিন।
  3. সম্পর্কের সময় কোনও অস্বস্তি বা ব্যথা হলে তৎক্ষণাৎ বন্ধ করুন।
  4. পরবর্তী গর্ভধারণ এড়াতে সুরক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করুন।

উপসংহার:

মাসিকের সময় সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সাধারণত কম থাকে, তবে কিছু পরিস্থিতিতে এটি সম্ভব। এটি একেবারে ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। সঠিক তথ্য এবং সুরক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। মাসিকের সময় যৌন সম্পর্কের সময় যদি কোনও ধরণের অসুবিধা হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Scroll to Top