মাসিক অনিয়মিত হওয়ার কারণ কি

মাসিক অনিয়মিত হওয়ার কারণ কি

নারীদের জীবনে মাসিক চক্র (পিরিয়ড) একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অনেক নারীই মাসিক অনিয়মিত হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। যখন পিরিয়ড স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আগে বা পরে হয়, কিংবা রক্তপাতের পরিমাণ অস্বাভাবিক থাকে, তখন তাকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়। এটি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। তাই এই বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকা খুবই জরুরি।

আজকে আমরা মাসিক অনিয়মিত হওয়ার বিভিন্ন কারণ, এর লক্ষণ এবং কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের এই আলোচনাটি আপনাকে আপনার শরীরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে এবং প্রয়োজনে সঠিক পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে।

মাসিক চক্র কি এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মাসিক চক্র হলো একজন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি নির্দেশক। সাধারণত প্রতি ২১ থেকে ৩৫ দিন পর পর মাসিক হয় এবং এর স্থায়িত্ব ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত হতে পারে। এই চক্রটি ডিম্বাশয় (Ovaries) থেকে ডিম্বাণু নির্গমন (Ovulation) এবং জরায়ুর (Uterus) ভেতরের আস্তরণ (Endometrium) ভেঙে রক্তপাতের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যেমন ইস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রজেস্টেরন (Progesterone)

নিয়মিত মাসিক চক্র একজন নারীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং প্রজনন ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। যখন এই চক্রে কোনো পরিবর্তন আসে, তখন বুঝতে হবে শরীরের ভেতরে কিছু একটা ঘটছে, যা মনোযোগের দাবি রাখে।

মাসিক অনিয়মিত হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী?

মাসিক অনিয়মিত হওয়ার মানে শুধু দেরিতে পিরিয়ড হওয়া নয়, এর আরও অনেক লক্ষণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

  • পিরিয়ড নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে হওয়া: যেমন, প্রতি মাসে একই তারিখে না হয়ে কখনো ১০ দিন আগে, কখনো ১৫ দিন পরে হওয়া।
  • মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন হওয়া: যদি মাসিক চক্র ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি হয়।
  • রক্তপাতের পরিমাণে অস্বাভাবিকতা: খুব বেশি রক্তপাত (Menorrhagia) বা খুব কম রক্তপাত (Hypomenorrhea) হওয়া।
  • পিরিয়ডের সময়কাল পরিবর্তন: ৭ দিনের বেশি রক্তপাত হওয়া বা ২ দিনের কম রক্তপাত হওয়া।
  • দুই মাসিকের মাঝখানে রক্তপাত (Spotting): পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর বা শুরু হওয়ার আগে অল্প রক্তপাত দেখা যাওয়া।
  • পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা (Dysmenorrhea): যদিও হালকা ব্যথা স্বাভাবিক, তবে অসহ্য ব্যথা অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ হতে পারে।
  • পিরিয়ড মিস হওয়া (Amenorrhea): টানা তিন মাস বা তার বেশি সময় পিরিয়ড না হওয়া।

যদি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি।

মাসিক অনিয়মিত হওয়ার কারণ কি?

মাসিক অনিয়মিত হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু কারণ বেশ সাধারণ এবং জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত, আবার কিছু কারণ গভীরতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। চলুন, বিস্তারিত জেনে নিই:

১. জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং অভ্যাস:

  • খুব বেশি মানসিক চাপ (Stress): মানসিক চাপ শরীরের হরমোনের ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। স্ট্রেস হরমোন মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনকে ব্যাহত করে, যার ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে বা সম্পূর্ণ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। কর্মজীবনের চাপ, পারিবারিক সমস্যা বা ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন অনিয়মিত মাসিকের কারণ হতে পারে।
  • ওজন পরিবর্তন:
    • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি (Obesity): শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে, যা মাসিক চক্রকে ব্যাহত করে। অতিরিক্ত ওজন প্রায়শই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সাথে সম্পর্কিত, যা ডিম্বস্ফোটনে বাধা দিতে পারে।
    • খুব বেশি ওজন কমে যাওয়া (Underweight) বা হঠাৎ ওজন কমানো: অপর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ বা তীব্র ডায়েট শরীরের চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সুস্থ মাসিক চক্রের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চর্বি থাকা জরুরি। ওজন খুব কমে গেলে শরীর মনে করে এটি গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত নয়, ফলে ডিম্বস্ফোটন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত ব্যায়াম: যারা খুব বেশি শরীরচর্চা করেন, বিশেষ করে পেশাদার অ্যাথলেটরা, তাদের মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম শরীরের হরমোনের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা মাসিক চক্রকে ব্যাহত করে।
  • খাদ্যাভ্যাস: অপুষ্টি, অনিয়মিত খাবার গ্রহণ বা বিশেষ ধরনের ডায়েট শরীরের পুষ্টি উপাদান এবং হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যা অনিয়মিত মাসিকের কারণ হয়।
  • ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া বা ঘুমের প্যাটার্নের পরিবর্তন শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম (জৈবিক ঘড়ি) এবং হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যা মাসিক চক্রে অনিয়মিততা আনতে পারে।
  • ধূমপান ও মদ্যপান: অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান শরীরের হরমোন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে, যা মাসিকের অনিয়মিততার কারণ হতে পারে।

২. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:

এটি মাসিক অনিয়মিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা পিরিয়ডকে প্রভাবিত করতে পারে।

  • পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS): এটি মাসিক অনিয়মিত হওয়ার একটি খুব সাধারণ কারণ। PCOS-এ আক্রান্ত নারীদের ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় (যেমন অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি)। এর ফলে ডিম্বস্ফোটন নিয়মিত হয় না বা একেবারেই হয় না, যার ফলে মাসিক অনিয়মিত হয় বা বন্ধ থাকে। এর সাথে ব্রণ, চুল পড়া, শরীরের লোম বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধিও হতে পারে।
  • থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা (Thyroid Disorders): থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের উপরও এর প্রভাব রয়েছে। থাইরয়েড হরমোনের অত্যধিক উৎপাদন (হাইপারথাইরয়েডিজম) বা অপর্যাপ্ত উৎপাদন (হাইপোথাইরয়েডিজম) উভয়ই মাসিক চক্রে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  • প্রোল্যাক্টিন হরমোনের আধিক্য (Hyperprolactinemia): প্রোল্যাক্টিন হরমোন মূলত স্তন্যপান করানোর সময় দুগ্ধ উৎপাদনে সাহায্য করে। কিন্তু যখন গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নন এমন একজন নারীর রক্তে এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন তা মাসিককে অনিয়মিত করতে পারে বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারে।
  • প্রি-ম্যাচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর (Premature Ovarian Failure – POF): এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে ডিম্বাশয় ৪০ বছর বয়সের আগেই স্বাভাবিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ডিম্বস্ফোটন এবং ইস্ট্রোজেন উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে মাসিক অনিয়মিত হয় এবং পরবর্তীতে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

৩. জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:

অনেক নারী জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যা মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।

  • গর্ভনিরোধক পিল (Birth Control Pills): বিশেষ করে প্রথম কয়েক মাস পিল ব্যবহার শুরু করার পর মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। এটি শরীরের হরমোনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিছু পিল মাসিকের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে বা পিরিয়ড সম্পূর্ণ বন্ধও করে দিতে পারে।
  • ইনজেকশন বা ইমপ্ল্যান্ট: জন্ম নিয়ন্ত্রণের ইনজেকশন বা ইমপ্ল্যান্ট হরমোন নিঃসরণ করে, যা মাসিককে খুবই অনিয়মিত করতে পারে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য পিরিয়ড বন্ধ রাখতে পারে।

৪. ঔষধের প্রভাব:

কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন:

  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ কমাতে ব্যবহৃত কিছু ওষুধ।
  • রক্তচাপের ওষুধ: কিছু উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ।
  • কেমোথেরাপি: ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কেমোথেরাপি ঔষধ ডিম্বাশয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • স্টেরয়েড: কিছু স্টেরয়েড ভিত্তিক ওষুধ।

৫. শারীরিক অসুস্থতা বা চিকিৎসা পরিস্থিতি:

  • জরায়ুর ফাইব্রয়েড (Uterine Fibroids): জরায়ুতে হওয়া নিরীহ (ক্যান্সার নয়) টিউমার মাসিক রক্তপাতকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অনিয়মিত বা অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
  • এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis): যখন জরায়ুর ভেতরের টিস্যু (এন্ডোমেট্রিয়াম) জরায়ুর বাইরে, যেমন ডিম্বাশয় বা ফ্যালোপিয়ান টিউবে বৃদ্ধি পায়, তখন এটি তীব্র ব্যথা এবং অনিয়মিত রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
  • পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID): প্রজনন অঙ্গের সংক্রমণ মাসিক চক্রকে ব্যাহত করতে পারে এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
  • জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের অস্বাভাবিকতা: জন্মগত ত্রুটি বা জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের গঠনে কোনো অস্বাভাবিকতা মাসিকের অনিয়মিততার কারণ হতে পারে।
  • সার্ভিক্যাল বা ইউটেরাইন পলিপস (Cervical or Uterine Polyps): জরায়ুমুখ বা জরায়ুর আস্তরণে ছোট, নিরীহ বৃদ্ধি, যা অনিয়মিত রক্তপাত ঘটাতে পারে।

৬. গর্ভাবস্থা এবং গর্ভধারণ সংক্রান্ত বিষয়:

  • গর্ভাবস্থা: মাসিক বন্ধ হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো গর্ভাবস্থা। যদি আপনার পিরিয়ড মিস হয় এবং আপনি যৌন সক্রিয় হন, তবে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা উচিত।
  • একটোপিক প্রেগনেন্সি (Ectopic Pregnancy): যখন নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে (যেমন ফ্যালোপিয়ান টিউবে) বৃদ্ধি পায়, তখন মাসিক অনিয়মিত হতে পারে এবং গুরুতর ব্যথা হতে পারে। এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি।
  • গর্ভপাত (Miscarriage): গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে গর্ভপাত হলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তপাত হতে পারে।
  • স্তন্যদান (Breastfeeding): সন্তান প্রসবের পর স্তন্যপান করানোর সময় শরীরের প্রোল্যাক্টিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ডিম্বস্ফোটনকে দমন করে এবং মাসিককে অনিয়মিত করতে পারে বা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে পারে।

৭. পেরিমেনোপজ (Perimenopause):

এটি মেনোপজের আগের সময়কাল, যখন ডিম্বাশয় ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর শুরু হয় এবং কয়েক বছর ধরে চলতে পারে। এই সময় হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে, যার ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়, কখনো আগে, কখনো পরে, কখনো বেশি রক্তপাত, কখনো কম রক্তপাত হতে পারে।

৮. ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং:

কখনও কখনও গর্ভাবস্থার খুব প্রাথমিক পর্যায়ে (যখন নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর দেয়ালে সংযুক্ত হয়) হালকা রক্তপাত (স্পটিং) হতে পারে, যা পিরিয়ডের মতো মনে হতে পারে কিন্তু আসলে তা নয়।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদিও মাসিক অনিয়মিত হওয়া সব সময় গুরুতর কিছু বোঝায় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিচের পরিস্থিতিগুলোতে দ্রুত ডাক্তারের সাথে কথা বলুন:

  • যদি আপনার মাসিক হঠাৎ করে অনিয়মিত হয়ে যায় এবং আপনি আগে নিয়মিত ছিলেন।
  • যদি আপনার মাসিক ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি দীর্ঘ হয়।
  • যদি আপনার পিরিয়ড ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা অতিরিক্ত রক্তপাত হয় (প্রতি ঘণ্টায় প্যাড পরিবর্তন করতে হয়)।
  • যদি টানা তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে আপনার পিরিয়ড বন্ধ থাকে (গর্ভাবস্থা ছাড়া)।
  • যদি মাসিক চক্রের মাঝখানে ঘন ঘন রক্তপাত হয়।
  • যদি পিরিয়ডের সময় অসহ্য ব্যথা হয় যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায়।
  • যদি অনিয়মিত মাসিকের সাথে সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন, ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, শরীরের লোম বৃদ্ধি, ব্রণ, চুল পড়া, বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত গরম লাগা বা ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি দেখা দেয়।
  • যদি আপনি গর্ভবতী হওয়ার চেষ্টা করছেন এবং মাসিক অনিয়মিত হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে।
  • যদি আপনার বয়স ৪০ বছরের নিচে হয় এবং মাসিক বন্ধ হয়ে যায় বা খুব অনিয়মিত হয় (প্রিম্যাচিউর মেনোপজের লক্ষণ হতে পারে)।

চিকিৎসক আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন, আপনার জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসার ইতিহাস সম্পর্কে জানবেন। প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা (হরমোনের মাত্রা, থাইরয়েড পরীক্ষা), আলট্রাসনোগ্রাফি বা অন্যান্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন, যাতে সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া যায়।

মাসিক অনিয়মিততা প্রতিরোধের জন্য কিছু টিপস:

যদিও সব অনিয়মিত মাসিক প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তন আপনাকে সাহায্য করতে পারে:

  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • মানসিক চাপ কমানো: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা পছন্দের কাজ করে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। ফল, সবজি, শস্য এবং পর্যাপ্ত প্রোটিন আপনার ডায়েটে রাখুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: অতিরিক্ত ব্যায়াম পরিহার করে প্রতিদিন মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করুন। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন বা খুব কম ওজন উভয়ই মাসিকের উপর প্রভাব ফেলে। একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: এই অভ্যাসগুলো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

উপসংহার:

মাসিক অনিয়মিত হওয়া অনেক নারীর জীবনে একটি সাধারণ সমস্যা। এর কারণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। মনে রাখবেন, এটি আপনার প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই, যদি আপনার মাসিক অনিয়মিত হয় এবং আপনি উদ্বিগ্ন হন, তবে আতঙ্কিত না হয়ে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। সঠিক কারণ নির্ণয় এবং সময়োপযোগী চিকিৎসা আপনাকে সুস্থ জীবন যাপনে সাহায্য করবে। আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে!

সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন!

Scroll to Top