সর্দির ট্যাবলেট এর নাম

সর্দির ট্যাবলেট এর নাম:

সর্দি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সাধারণত ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে। এটি শীতের দিনে বা আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় বেশি দেখা যায়। সর্দি হলে নাক বন্ধ হওয়া, হাঁচি, কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। সর্দির চিকিৎসার জন্য সাধারণত কিছু ওষুধ এবং ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয়, যা সর্দি ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলি দূর করতে সাহায্য করে। নিচে সর্দির চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু জনপ্রিয় ওষুধের নাম এবং সেগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সর্দির চিকিৎসায় ব্যবহৃত ট্যাবলেটের নাম:

১. প্যারাসিটামল (Paracetamol)

প্যারাসিটামল মূলত জ্বর এবং শরীর ব্যথা উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। তবে সর্দির সময় যদি হালকা জ্বর থাকে, তবে এটি কার্যকর হতে পারে।

  • ডোজ: সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ২-৩ বার একটি ট্যাবলেট খাওয়া হয়।
  • ব্র্যান্ড নাম: নাপা, ক্রেস্টিন, টাইলিনল ইত্যাদি।

২. সিট্রিজিন (Cetirizine)

সিট্রিজিন একটি অ্যান্টি-হিস্টামিন ওষুধ, যা অ্যালার্জিজনিত সর্দি এবং নাক বন্ধ সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • ডোজ: রাতে একবার একটি ট্যাবলেট নেওয়া যায়।
  • ব্র্যান্ড নাম: আলারেক্স, সিট্রাজিন।

৩. লোরাটাডিন (Loratadine)

এটি সিট্রিজিনের মতোই অ্যান্টি-হিস্টামিন ওষুধ, তবে এটি হালকা অ্যালার্জিজনিত সর্দির ক্ষেত্রে কার্যকর।

  • ডোজ: দিনে একবার একটি ট্যাবলেট।
  • ব্র্যান্ড নাম: ক্লারিটিন।

৪. মন্টেলুকাস্ট (Montelukast)

এটি অ্যালার্জিজনিত সর্দি এবং হাঁপানির জন্য ব্যবহৃত হয়। যদি আপনার সর্দি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে ডাক্তার এটি প্রেসক্রাইব করতে পারেন।

  • ডোজ: রাতে একবার একটি ট্যাবলেট।
  • ব্র্যান্ড নাম: মোনাস, সিঙ্গুলেয়ার।

৫. ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine)

এটি একটি নন-সেডেটিভ অ্যান্টি-হিস্টামিন, যা ঘুম না এনে সর্দি এবং অ্যালার্জি উপশম করতে সাহায্য করে।

  • ডোজ: দিনে একবার একটি ট্যাবলেট।
  • ব্র্যান্ড নাম: টেলফাস্ট।

৬. ডিকনজেস্টেন্ট (Decongestant)

ডিকনজেস্টেন্ট ওষুধ নাক বন্ধ হওয়া সমস্যার জন্য খুবই কার্যকর।

  • উপাদান: সিউডোইফেড্রিন (Pseudoephedrine) বা ফিনাইলএফ্রিন (Phenylephrine)।
  • ব্র্যান্ড নাম: সুডাফেড, অ্যাকটিফেড।

৭. ক্লোরফেনিরামিন (Chlorpheniramine)

এটি সর্দি এবং হাঁচি কমানোর জন্য ব্যবহৃত একটি অ্যান্টি-হিস্টামিন।

  • ডোজ: রাতে একবার একটি ট্যাবলেট।
  • ব্র্যান্ড নাম: পিরিটন।

৮. এম্ব্রোক্সল (Ambroxol)

এটি মিউকোলাইটিক ওষুধ, যা ঘন সর্দিকে পাতলা করে এবং সহজে বের করতে সাহায্য করে।

  • ডোজ: দিনে ২-৩ বার।
  • ব্র্যান্ড নাম: মুকোসোলভান।

৯. ডেক্সট্রোমেথরফান (Dextromethorphan)

এটি কাশির জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে সর্দির সঙ্গে কাশি থাকলে এটি কার্যকর।

  • ডোজ: দিনে ৩ বার।
  • ব্র্যান্ড নাম: বেনাড্রিল কফ সিরাপ, টাসকিল।

১০. এন্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs)

যেমন আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রক্সেন, সর্দি থেকে শরীর ব্যথা বা মাথা ব্যথা হলে ব্যবহৃত হয়।

  • ডোজ: দিনে ২ বার।
  • ব্র্যান্ড নাম: ব্রুফেন, ন্যাপ্রোসিন।

সর্দির চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য সিরাপ ও স্প্রে:

১. নাকের স্প্রে (Nasal Spray):

নাক বন্ধ থাকলে নাকের স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • ব্র্যান্ড নাম: ওট্রিভিন, অক্সিমেটাজোলিন।

২. কফ সিরাপ:

কাশির জন্য কফ সিরাপ সর্দির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।

ব্র্যান্ড নাম: অ্যাসকোরিল, টাসকিল।

প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া উপায়ে সর্দির চিকিৎসা:

ওষুধের পাশাপাশি ঘরোয়া পদ্ধতিতে সর্দি কমানো যেতে পারে। কিছু কার্যকর পদ্ধতি:

  1. গরম পানি পান করা।
  2. মধু ও আদা মিশিয়ে খাওয়া।
  3. তুলসী পাতার রস পান।
  4. নুন-পানি দিয়ে গার্গল করা।
  5. গরম ভাপ নেওয়া।

সর্দি হলে কী করবেন এবং কী করবেন না?

কী করবেন:

  1. প্রচুর পানি পান করুন।
  2. আরাম করুন এবং বিশ্রামে থাকুন।
  3. পুষ্টিকর খাবার খান।

কী করবেন না:

  1. ঠাণ্ডা পানি বা আইসক্রিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  2. ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
  3. ভেজা অবস্থায় বেশি সময় থাকা এড়িয়ে চলুন।

সর্দি হলে কখন ডাক্তার দেখাবেন?

সর্দি সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে নিচের সমস্যাগুলি দেখা দিলে ডাক্তার দেখানো উচিত:

  1. সর্দি ১০ দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
  2. তীব্র গলা ব্যথা বা কানের ব্যথা হলে।
  3. শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হলে।
  4. জ্বর বেশি হলে।
  5. শিশু বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে সর্দি হলে।

সর্দি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়:

  1. ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলুন।
  2. হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  3. মাস্ক ব্যবহার করুন।
  4. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
  5. পর্যাপ্ত ঘুমান।

উপসংহার:

সর্দি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক যত্ন না নিলে তা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। তাই সঠিক চিকিৎসা এবং পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Scroll to Top