
সহবাস কেন করতে হয়:
সহবাস বা যৌনসম্পর্ক শুধু শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন, সহবাস শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের জন্য, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান এবং চিকিৎসাবিদ্যা বলছে, এটি দাম্পত্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করতে, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং শারীরিক উপকারিতা পেতে সাহায্য করে।
বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ:
১. সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে
দম্পতিদের মধ্যে ভালোবাসা ও ঘনিষ্ঠতার অন্যতম মাধ্যম হল সহবাস। এটি অক্সিটোসিন (Oxytocin) নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে, যা “ভালোবাসার হরমোন” নামে পরিচিত। এটি পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ায় এবং সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করে তোলে।
২. মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা হতাশা কমাতে সহবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি এন্ডরফিন (Endorphin) নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং হতাশা কমায়। পাশাপাশি, এটি ঘুমের গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
সহবাসের মাধ্যমে বিভিন্ন শারীরিক উপকারিতা পাওয়া যায়, যেমন:
- হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: এটি রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে: নিয়মিত সহবাস করলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি বাড়ে।
- ব্যথা কমাতে সাহায্য করে: সহবাসের সময় নির্দিষ্ট কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মাথাব্যথা, মাসিকের ব্যথা এবং অন্যান্য শারীরিক ব্যথা কমাতে পারে।
৪. হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে
সহবাস শরীরের টেস্টোস্টেরন (Testosterone) ও এস্ট্রোজেন (Estrogen) হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে হাড় ও পেশি শক্তিশালী থাকে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা দেরিতে আসে।
৫. সন্তান উৎপাদনের জন্য সহবাসের গুরুত্ব
সন্তান উৎপাদনের জন্য সহবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যবান ও সক্ষম দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়। এছাড়া, নিয়মিত সহবাস পুরুষের স্পার্ম কোয়ালিটি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
সহবাস করার সময় শরীরে প্রচুর ক্যালোরি পোড়ে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যায়ামের মতো কার্যকর হতে পারে, বিশেষ করে যদি নিয়মিতভাবে করা হয়।
৭. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে
একটি ভালো দাম্পত্য সম্পর্ক একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিতৃপ্তি থাকলে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৮. প্রসবের পর দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে
গর্ভধারণ ও প্রসবের পর নারীদের শরীরে কিছু পরিবর্তন আসে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগে। সহবাস করলে এসব পরিবর্তন স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে এবং মেজাজ ভালো রাখে।
৯. বয়সজনিত সমস্যা কমায়
বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। নিয়মিত সহবাস করলে যৌন অক্ষমতা দূর হতে পারে এবং যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
সহবাস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা:
অনেকেই মনে করেন, বেশি সহবাস করলে শারীরিক দুর্বলতা আসে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং সঠিক ও নিয়মিত সহবাস শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
সঠিক সহবাসের জন্য কিছু পরামর্শ
- মানসিক প্রস্তুতি নিন এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ান।
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
- যদি যৌনজীবনে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- পারস্পরিক সম্মতি ও আনন্দ নিশ্চিত করুন।
উপসংহার:
সহবাস শুধু সন্তান উৎপাদনের জন্য নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সম্পর্ককে দৃঢ় করে, শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। সুতরাং, সহবাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা জরুরি এবং স্বাস্থ্যকর যৌনজীবন উপভোগ করা উচিত।