ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ

ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ:

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা সারা বিশ্বে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি এবং ইনসুলিনের কার্যক্ষমতার অভাবের কারণে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার সঠিক মাত্রা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম হলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আজ আমরা জানব রক্তে শর্করার মাত্রা কত হলে বিপদজনক হয়ে ওঠে এবং কেন তা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা কত?

রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা নির্ভর করে খাবার খাওয়ার আগে বা পরে এটি মাপা হচ্ছে কিনা। সাধারণত রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা হল:

  • খালি পেটে (Fasting): ৭০-১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL)
  • খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর: ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে
  • HbA1c (৩ মাসের গড় শর্করার মাত্রা): ৫.৭% এর নিচে

যদি রক্তে শর্করার মাত্রা এই সীমার বাইরে যায়, তবে তা বিপদজনক হতে পারে।

ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ?

১. রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি হলে (Hyperglycemia)

রক্তে শর্করার মাত্রা যদি ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয়, তবে তাকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তশর্করা মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন:

  • ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (DKA): টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এতে শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা জীবনঘাতী হতে পারে।
  • হাইপারওসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক স্টেট (HHS): এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে দেখা যায় এবং ডিহাইড্রেশনের ফলে অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

লক্ষণ:

  • অতিরিক্ত পিপাসা
  • ঘন ঘন প্রস্রাব
  • ক্লান্তি
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • বমি বা পেটব্যথা

২. রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কম হলে (Hypoglycemia)

রক্তে শর্করার মাত্রা যদি ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে নেমে যায়, তবে তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। এটি দ্রুত চিকিৎসা না করলে অজ্ঞান হওয়া বা মৃত্যু ঘটতে পারে।

লক্ষণ:

  • ঘামানো
  • মাথা ঘোরা
  • কম্পন
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
  • বিভ্রান্তি
  • অজ্ঞান হওয়া

৩. দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তশর্করা থেকে জটিলতা

দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি: স্নায়ুর ক্ষতি
  • ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি: চোখের সমস্যা
  • কিডনির ক্ষতি: ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি
  • হার্টের সমস্যা: হৃদরোগ এবং স্ট্রোক

বিপদ এড়াতে করণীয়:

১. নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন

ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা।

২. সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন

  • কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার খান।
  • চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • আঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার খান।

৩. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৪. ওষুধ এবং ইনসুলিন সঠিকভাবে নিন

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করুন। কখনোই নিজের ইচ্ছামতো ডোজ পরিবর্তন করবেন না।

৫. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন

মানসিক চাপ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা শখের কাজের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।

৬. বিপদের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

উপসংহার:

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা কম হলে তা জীবনহানিকর হতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন, সুষম খাবার খান, এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। সচেতনতা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

Scroll to Top