
সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস?
ডায়াবেটিস হল একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘটে। অনেক মানুষই জানেন না কখন তাদের রক্তের সুগার লেভেল ডায়াবেটিসের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো সুগার লেভেলের বিভিন্ন ধাপ, কীভাবে এটি নির্ণয় করা হয়, এবং কীভাবে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সুগার লেভেল ও ডায়াবেটিস নির্ণয়ের ধাপ:
ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য মূলত তিন ধরনের পরীক্ষা করা হয়:
- ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS) টেস্ট – খালি পেটে রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
- পোস্ট প্রান্ডিয়াল (PPBS) বা খাবারের পর সুগার টেস্ট – খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
- HbA1c টেস্ট – এটি গত ৩ মাসের গড় রক্তের শর্করার মাত্রা পরিমাপ করে।
সুগার লেভেলের স্বাভাবিক মাত্রা
পরীক্ষা | স্বাভাবিক (Normal) | প্রি-ডায়াবেটিস (Prediabetes) | ডায়াবেটিস (Diabetes) |
ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS) | ৭০-৯৯ mg/dL | ১০০-১২৫ mg/dL | ১২৬ mg/dL বা তার বেশি |
পোস্ট প্রান্ডিয়াল (PPBS) | ১৪০ mg/dL এর নিচে | ১৪০-১৯৯ mg/dL | ২০০ mg/dL বা তার বেশি |
HbA1c | ৫.৭% এর নিচে | ৫.৭% – ৬.৪% | ৬.৫% বা তার বেশি |
ডায়াবেটিসের লক্ষণসমূহ:
অনেক সময় মানুষ ডায়াবেটিসের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও বারবার প্রস্রাব হওয়া
- সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
- ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
- ত্বকের ইনফেকশন বেশি হওয়া
- হাত ও পায়ে ঝিঁঝি ধরা বা অবশ অনুভব করা
যদি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে দ্রুত রক্তের সুগার লেভেল পরীক্ষা করা উচিত।
ডায়াবেটিসের কারণসমূহ:
ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের হয় – টাইপ ১ এবং টাইপ ২। টাইপ ১ ডায়াবেটিস শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনের ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে হয়, যা সাধারণত শিশু বা কিশোরদের মধ্যে দেখা যায়। অন্যদিকে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে এবং এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
ডায়াবেটিস হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ নিচে দেওয়া হলো:
- জিনগত বা বংশগত কারণ
- অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস
- শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
- ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়:
ডায়াবেটিস হলে বা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে হলে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
✅ যা খেতে পারেন:
- উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার (সবজি, ফল, ব্রাউন রাইস, ওটস)
- স্বাস্থ্যকর প্রোটিন (মাছ, ডাল, বাদাম, দই)
- পর্যাপ্ত পানি পান করা
- কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) সম্পন্ন খাবার গ্রহণ করা
❌ যা এড়িয়ে চলা উচিত:
- অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার
- সাদা চাল ও ময়দার তৈরি খাবার
- অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার
- প্রসেসড ও ফাস্ট ফুড
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
✅ উপযুক্ত ব্যায়াম:
- প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা
- যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন
- কার্ডিও ও ওজন প্রশিক্ষণ
৩. মানসিক চাপ কমান
মানসিক চাপ সরাসরি সুগার লেভেল বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য:
- মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করুন
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
- পছন্দের কাজ করুন
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
পানি শরীরের টক্সিন বের করে দেয় এবং শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন
ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি।
✅ করণীয়:
- নিয়মিত রক্তের সুগার পরীক্ষা করা
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা
- ইনসুলিন গ্রহণের প্রয়োজন হলে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা
পরামর্শ:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একজন পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে সুগার লেভেল সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
উপসংহার:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সুগার লেভেল সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। স্বাভাবিক সুগার লেভেল কত হওয়া উচিত তা জানা, নিয়মিত পরীক্ষা করা, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
যদি আপনার সুগার লেভেল স্বাভাবিক মাত্রার বাইরে থাকে, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন করুন। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন!