টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত না

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত না?

টাইফয়েড জ্বর একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। টাইফয়েড হলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং হজমশক্তি কমে যায়। তাই এই সময়ে সঠিক খাবার খাওয়া এবং কিছু খাবার এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা এই ব্লগে আলোচনা করবো টাইফয়েড জ্বর হলে কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত এবং কেন। পাশাপাশি, কিছু প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাস ও যত্নের পরামর্শও থাকছে।

টাইফয়েড জ্বর কী এবং কেন সঠিক খাবার গুরুত্বপূর্ণ?

টাইফয়েড জ্বর মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগে অন্ত্রে সংক্রমণ হয়, তাই হজমশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। সঠিক খাবার না খেলে ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে এবং রোগী আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

টাইফয়েডে খাবারের ভূমিকা:

হজম সহজ হয় এমন খাবার খেতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার শরীরের শক্তি বাড়ায়।
দূষিত বা ভারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, যাতে সংক্রমণ না বাড়ে।

টাইফয়েড জ্বরে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন?

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে:

১. মসলাযুক্ত ও ঝাল খাবার

ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার হজমের জন্য কঠিন এবং পাকস্থলীর প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়।

বর্জনীয় খাবার:

  • ঝাল মসলা যুক্ত তরকারি
  • গরম মসলা (গরম মসলা, লবঙ্গ, দারুচিনি, গোলমরিচ ইত্যাদি)
  • তেলেভাজা ও ঝাল স্ন্যাকস (সামুচা, সিঙাড়া, চিপস, চানাচুর)

বিকল্প:

  • সেদ্ধ করা খাবার
  • হালকা মশলা ছাড়া রান্না

২. ভাজা ও ফাস্ট ফুড

ভাজাপোড়া খাবার হজমের জন্য কঠিন এবং এটি পাকস্থলীর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

বর্জনীয় খাবার:

  • ডিপ ফ্রাইড খাবার (পুরি, পরোটা, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই)
  • ফাস্ট ফুড (বার্গার, পিজ্জা, ফ্রায়েড চিকেন, হট ডগ)

বিকল্প:

  • সেদ্ধ করা সবজি
  • হালকা ভাপে রান্না করা খাবার

৩. দুগ্ধজাত খাবার ও দুধ

টাইফয়েড হলে অনেকের ল্যাকটোজ হজম করতে সমস্যা হয়, ফলে দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করাই ভালো।

বর্জনীয় খাবার:

  • ফুল-ফ্যাট দুধ
  • চিজ, পনির, কনডেন্সড মিল্ক
  • আইসক্রিম

বিকল্প:

  • ল্যাকটোজ-মুক্ত দুধ
  • দই বা ঘোল (কম পরিমাণে)

৪. উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার

অতিরিক্ত ফাইবারযুক্ত খাবার হজমের জন্য কঠিন এবং এটি ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা বাড়াতে পারে।

বর্জনীয় খাবার:

  • কাঁচা শাকসবজি
  • ব্রাউন রাইস, লাল চাল
  • মটরশুঁটি, ডাল

বিকল্প:

  • সাদা ভাত
  • নরম রান্না করা সবজি

৫. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ও কোমল পানীয়

ক্যাফেইন এবং চিনিযুক্ত পানীয় শরীরের পানির মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে এবং হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

বর্জনীয় পানীয়:

  • কফি
  • চা (বিশেষ করে ব্ল্যাক টি)
  • কোলা, সফট ড্রিঙ্ক

বিকল্প:

  • গ্রিন টি (কম ক্যাফেইনযুক্ত)
  • বিশুদ্ধ পানি

৬. অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার

চিনি হজমের জন্য শক্তি প্রয়োজন হয় এবং টাইফয়েডে শরীর দুর্বল থাকার কারণে এটি হজম করা কষ্টকর।

বর্জনীয় খাবার:

  • মিষ্টি (রসগোল্লা, লাড্ডু, চকলেট, কেক)
  • মিষ্টিজাতীয় পানীয়

বিকল্প:

  • প্রাকৃতিক ফল
  • মধু (সীমিত পরিমাণে)

৭. অতিরিক্ত লবণ ও প্রসেসড খাবার

অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা টাইফয়েডে ক্ষতিকর।

বর্জনীয় খাবার:

  • প্রসেসড মাংস (সসেজ, স্যালামি, ক্যানড খাবার)
  • প্যাকেটজাত খাবার (নুডলস, চিপস, ফ্রোজেন ফুড)

বিকল্প:

  • ঘরে তৈরি হালকা খাবার
  • কম লবণযুক্ত রান্না

টাইফয়েড জ্বরে কোন খাবারগুলো খাওয়া নিরাপদ?

টাইফয়েডের সময় হালকা, সিদ্ধ ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। নিচের খাবারগুলো নিরাপদ—

(ক) তরল ও হালকা খাবার

ডাবের পানি ও ওরাল স্যালাইন (পানিশূন্যতা রোধ করে)।
সবজির স্যুপ (গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো স্যুপ)।
দই-চিঁড়া (প্রোবায়োটিকস যুক্ত, হজমে সাহায্য করে)।

(খ) সিদ্ধ ও নরম খাবার

ভাত ও মুসুর ডাল (হজমে সহজ)।
সিদ্ধ আলু ও মাছ (প্রোটিনের ভালো উৎস)।
কলা ও আপেল (পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, ডায়রিয়া কমায়)।

(গ) প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

সিদ্ধ ডিম (সাদা অংশ)।
মুরগির স্যুপ বা ঝোল (হাড়ের ঝোল উপকারী)।
মসুর ডাল (হজমে সহায়ক)।

টাইফয়েড রোগীর জন্য করণীয়:

টাইফয়েড জ্বরে দ্রুত সুস্থ হতে হলে কিছু খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তন করতে হবে।

১. প্রচুর পানি পান করুন

টাইফয়েডের কারণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি।

পানীয়:

  • বিশুদ্ধ পানি
  • ওরস্যালাইন
  • ডাবের পানি
  • লেবুর শরবত (চিনি ছাড়া)

২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

টাইফয়েড শরীরকে খুব দুর্বল করে দেয়, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া দরকার।

ভালো অভ্যাস:

  • কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমানো
  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়ানো

৩. হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খান

টাইফয়েড হলে হজম ক্ষমতা কমে যায়, তাই সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত।

উপযুক্ত খাবার:

  • সেদ্ধ ভাত
  • সবজি স্যুপ
  • নরম ফল (কলা, পেঁপে, আপেল)

উপসংহার:

টাইফয়েড জ্বর হলে সঠিক খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মসলাযুক্ত, ভাজাপোড়া, ক্যাফেইনযুক্ত, এবং অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। পরিবর্তে সহজপাচ্য, সুষম ও হালকা খাবার গ্রহণ করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করা, বিশ্রাম নেওয়া, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।

পরামর্শ: যদি টাইফয়েডের লক্ষণ দীর্ঘদিন থাকে বা তীব্র হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন!

Scroll to Top