
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে ?
এই ব্লগে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এবং কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্মক আকারে ধারণ করছে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যেতে পারে এবং শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এই অবস্থায় সঠিক খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ডেঙ্গু জ্বরের সময় খাওয়ার গুরুত্ব:
ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। এ সময় সঠিক খাবার খেলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। সঠিক খাবার রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরকে হাইড্রেট রাখে, এবং রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য আমাদের ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে তা সবাইকেই জানা প্রয়োজন।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, উপযুক্ত খাবার গুলো কি কি ?
১. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল বেরিয়ে যায়, যা পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে। তাই রোগীকে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানি ছাড়াও নিচের পানীয়গুলো খাওয়া যেতে পারে:
- নারকেলের পানি: এটি ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।
- ওরাল স্যালাইন: শরীরে লবণ এবং তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
- লেবুর শরবত: এটি ভিটামিন সি সরবরাহ করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে।
- তাজা ফলের রস: বিশেষত পেঁপে, কমলা, এবং বেল ফলের রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২. ফল এবং সবজি
ডেঙ্গু জ্বর হলে ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ ফল এবং সবজি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- পেঁপে: পেঁপে এবং পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।
- কমলা: ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- গাজর, শসা, এবং বিট: এগুলো শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।
- কাঁচা পেঁপে এবং ব্রকোলি: এগুলো সহজপাচ্য এবং ভিটামিন এ এবং কে সমৃদ্ধ।
৩. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন বাড়ে। রোগীর খাদ্যতালিকায় নিম্নলিখিত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত:
- ডিম: সেদ্ধ ডিম হজমে সহজ এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ।
- মুরগির সুপ: এটি শরীরের এনার্জি বাড়ায় এবং হজমেও সাহায্য করে।
- মাছ: বিশেষত চিতল মাছ বা রুই মাছ সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর।
- ডাল: সাদা মুগ ডাল বা লাল ডাল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সহজে হজম হয়।
৪. শর্করা সমৃদ্ধ খাবার
শর্করা শরীরে শক্তি যোগায়, যা ডেঙ্গু জ্বরে খুবই প্রয়োজনীয়।
- ভাত: সাদা ভাত সহজে হজম হয় এবং দ্রুত এনার্জি দেয়।
- পোলাও বা খিচুড়ি: এটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।
- রুটি: সাদা আটার রুটি বা ওটস ভালো বিকল্প।
৫. ভেষজ চা এবং গরম পানীয়
ডেঙ্গু জ্বরের সময় গরম ভেষজ চা বা পানীয় রোগীকে আরাম দেয়।
- তুলসী পাতার চা: এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং গলা আরাম দেয়।
- আদা চা: এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরকে উষ্ণ রাখে।
- গরম লেবু পানি: এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
ডেঙ্গু জ্বরে কী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত:
১. তৈলাক্ত এবং ঝাল খাবার
তৈলাক্ত এবং ঝাল খাবার হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে, যা ডেঙ্গু জ্বরে অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে।
২. রাসায়নিকযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার
প্যাকেটজাত খাবার, সফট ড্রিঙ্ক, এবং ক্যানড খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং হজমে সমস্যা করে।
৩. অতিরিক্ত চিনি এবং লবণ
অতিরিক্ত চিনি এবং লবণ পানিশূন্যতার সমস্যা বাড়ায়। তাই মিষ্টি খাবার এবং অতিরিক্ত নোনতা খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪. অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন
অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন শরীরকে আরও ডিহাইড্রেট করে। তাই এই ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।
ডেঙ্গু রোগীর খাবারে বিশেষ যত্ন:
- খাদ্যতালিকা অবশ্যই সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর হওয়া উচিত।
- গরম খাবার ও পানীয় খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- ছোট ছোট পরিমাণে বারবার খাবার দিন।
- রোগীকে বিশ্রামে থাকতে দিন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
উপসংহার:
ডেঙ্গু জ্বরের সময় সঠিক খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি শরীরকে দ্রুত সুস্থ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের পাশাপাশি সঠিক ডায়েট অনুসরণ করলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে। তাই ডেঙ্গু জ্বরে খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকুন এবং যেকোনো জটিলতা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।